এমন বিধ্বংসী ঝড় এই প্রথম দেখল দীঘা
ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লেও ঝোড়ো হাওয়ার সেই তেজ শহর কলকাতায় দেখা যায়নি। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় দাপট দেখিয়েছে যশ। ওড়িশার বালেশ্বরের উপর দিয়েই ঝড়ের ‘চোখ’ বয়ে গিয়েছে এবং তা চলে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের দিকে। যার ভালো প্রভাব পড়েছে দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন অংশে। দীঘার (Digha) বাসিন্দাদের বক্তব্য, এর আগে তাঁরা এমন বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সামনে পড়েননি।
গত তিন দশকে ওড়িশা উপকূলে অনেকগুলি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে। কিন্তু বালেশ্বর বা সংলগ্ন এলাকায় কোনও ঝড়ই তেমন ধ্বংসলীলা চালায়নি। দীঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ের থেকেও বেশি দাপট ছিল জলস্ফীতির। সমুদ্র্রের জল পাড় ছাপিয়ে চলে এসেছে জনপদে। দীঘার মূল রাস্তাও একটা সময়ে চলে গিয়েছিল জলের তলায়। এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেননি দীঘার মানুষ। মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুরেও একইরকম জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলেও জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সময় ভরা কোটাল থাকায় বিভিন্ন নদী উত্তাল হয়ে ওঠে।
জলোচ্ছ্বাসের অন্য একটি কারণের কথা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মিহির গুহের কথায়। তিনি বলেন, যখন কোনও ঘূর্ণিঝড় কোথাও আছড়ে পড়ে, তখন তার ডানদিকের অংশে জলস্ফীতি দেখা দেয়। আর বাঁ দিকের অংশে হয় তার উল্টোটা। সেখানে সমুদ্রের জল নীচে নেমে যায়। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সময় বায়ুর স্রোতজনিত হেরফেরেই এটা হয়। বালেশ্বরের ২০ কিমি দক্ষিণে আছড়ে পড়েছে ‘যশ’। ফলে দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ উপকূল এলাকায় জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিরিখে এই জায়গাগুলি সবকটিই ডানদিকে অবস্থিত।
বালেশ্বরের তুলনায় দীঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ের বেগ অনেকটাই কম ছিল। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বালেশ্বরে যশের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিমি। দমকা হাওয়ার বেগ ১৫৫ কিমি পর্যন্ত উঠেছিল। তবে ৮০ কিমি দূরে অবস্থিত দীঘায় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিমির কাছাকাছি। অতি তীব্র এই ঘূর্ণিঝড় যতটা তীব্রতা পাবে বলে আশা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ততটা আঘাত হানতে পারেনি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উপকূলের যে জায়গায় যশ আছড়ে পড়েছে, সেখান থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা অনেকটা দূরে হওয়ায় এর প্রভাব মহানগরে বিশেষ পড়েনি।
১৯৯৯ সালে ২৫০ কিমির বেশি গতিতে এসেছিল সুপার সাইক্লোন। ওড়িশার জগৎসিংপুরে উপকূলে আছড়ে পড়েছিল সেটি। পরবর্তীকালে ফাইলিন, ফণী প্রভৃতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ওড়িশার উপর দিয়ে গিয়েছে। তবে অতীতের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, ১৮৩১ সালের অক্টোবর মাসে বালেশ্বরের কাছে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল। পরবর্তীকালে ১৮৪৬ এবং ১৯৪২ সালে তৎকালীন মেদিনীপুরের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল দু’টি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।