রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রিভিউ মিটিং-এ মোদী আসার আগে-পরে মমতাকে আক্রমণ বিজেপির পরিকল্পিত!

May 29, 2021 | 2 min read

শুক্রবার নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যাবেন না ধরে নিয়েই আগে থেকে ‘আক্রমণ’-এর প্রস্তুতি রেখেছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে মুখ্যমন্ত্রী আসেননি বলে যে ভাবে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক যোগে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা আক্রমণ শানান, তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় পরিকল্পনা করেই ওই যুথবদ্ধ আক্রমণ। উল্লেখ্য, সেই আক্রমণে শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া রাজ্য বিজেপি-র অন্য শীর্ষনেতাদের সে ভাবে যোগদান ছিল না। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, মমতা মোদীর বৈঠকে ‘যাবেন বা যাবেন না’ দুই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই শুক্রবার সকালে রাজ্যনেতারা নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করে সুর বেঁধে নিয়েছিলেন।

বিজেপি (BJP) সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দলের বক্তব্য ঠিক করার প্রস্তুতি শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার জন্য শুক্রবার কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটিতে মোদীর সঙ্গে মমতার বৈঠক আগে থেকেই ঠিক ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ওই বৈঠকে শুভেন্দুর থাকার কথা জানার পরেই তৈরি হয় আপত্তি। মমতা ওই বৈঠকে যে না-ও যোগ দিতে পারেন, সেটা বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লিকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই শুক্রবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ছাড়াও ছিলেন শমীক ভট্টাচার্য-সহ দলের সব মুখপাত্র। সেখানেই ঠিক হয়, মমতা বৈঠকে গেলে সংবাদমাধ্যমকে কী প্রতিক্রিয়া দিতে হবেআর না গেলে কী ভাবে করা হবে আক্রমণ।

শুক্রবার সকাল থেকেই শুভেন্দুর ওই বৈঠকে থাকা নিয়ে আপত্তি তুলতে শুরু করে তৃণমূল। তার ‘জবাব’ দিতে সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে রাজ্য বিজেপি-র পক্ষে ১৯ মে শুভেন্দুর পাওয়া একটি চিঠি প্রকাশ্যে আনা হয়। যে চিঠিতে বিধানসভার সচিবালয় শুভেন্দুকে ‘বিরোধী দলনেতা’ হিসেবে স্বীকৃতির কথা জানিয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, মোদীর বৈঠকে শুভেন্দুর উপস্থিতির পক্ষে যুক্তি তৈরি করছে বিজেপি। অন্যদিকে, মমতা সাগরে প্রশাসনিক বৈঠকের মধ্যেই জানান, তিনি মোদীর বৈঠকে থাকবেন না। ফলে বিজেপি ‘প্ল্যান-বি’ অনুযায়ী তৈরি হতে শুরু করে।

তবে বৈঠকে না থাকলেও কলাইকুন্ডায় গিয়ে মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ক্ষয়ক্ষতির নথিপত্র তুলে দেন মমতা। পরে তিনি জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে দিঘায় যাওয়ার তাড়া থাকায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে থাকতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই তিনি দিঘায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তত ক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে যুথবদ্ধ টুইট-আক্রমণ। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে না থাকার জন্য মমতার কড়া নিন্দা শুরু করেন। একে একে রাজনাথ সিংহ থেকে স্মৃতি ইরানি, জেপি নড্ডা থেকে যোগী আদিত্যনাথ-সহ বিজেপি-র ওজনদার নেতাদের প্রায় সকলেই একই সুরে আক্রমণ শানান। সকলেই বলতে থাকেন, প্রধানমন্ত্রীকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করানোটা ঠিক হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। সেই সঙ্গে পাশাপাশি তুলে ধরা হয় মোদীর ওড়িশা ও বাংলার বৈঠকের ছবি। তাতে কলাইকুন্ডায় যে ঘরে বৈঠক ছিল, তার একটি ‘ওয়াইড অ্যাঙ্গল’-এ তোলাছবি, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারটি খালি। বস্তুত, একটা সময়ে ওই খালি চেযারটিকে গাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিতও করে দেওয়া হয়। তার পর সেই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয় নেটমাধ্যমে।

ওই আক্রমণ পর্বে অবশ্য রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষনেতাদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। বিজেপি সূত্রের খবর, এমনটাই নাকি পরিকল্পনা ছিল। রাজ্য নেতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম টুইট করে শুক্রবারকে ‘কালো দিন’ বলে দাবি করেন শুভেন্দু। দিলীপ-সহ রাজ্যের প্রথম সারির নেতারা শাহ, নড্ডাদের টুইট রিটুইট করলেও নিজেরা কিছু বলেননি। কোনও টুইটও করেননি। যা থেকে এটাও স্পষ্ট যে, মমতার অনুপস্থিতি নিয়ে জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে প্রচারে জোর দেওয়াতেই বেশি আগ্রহ ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। সেই মতোই পরিকল্পনাও করেছিলেন তাঁরা। মমতাকে আক্রমণ করার পাশাপাশিই মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Alapan Bandyopadhyay) দিল্লিতে তলব করার বিষয়টিও শুরু হয়ে য়ায়। অর্থাৎ রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক— উভয় দিক থেকেই মমতাকে আক্রমণ শুরু হয়ে যায় কেন্দ্রের শাসকদলের তরফে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #alapan bandyopadhyay

আরো দেখুন