করোনার বছরে বাঙালিকে পাঁঠার মাংস খাইয়ে লক্ষ্মীলাভ রাজ্যের
করোনার ধাক্কায় গত আর্থিক বছরে টলে গিয়েছিল আর্থিক হাল। শিল্প সংস্থাগুলির বেশিরভাগই তেমন ভালো কিছু করে উঠতে পারেনি। অথচ এর ঠিক উল্টোপথে দৌড়েছে রাজ্য সরকারের মাংস ব্যবসা। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের ‘হরিণঘাটা মিট’ ১১৭ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে গত অর্থবর্ষে। আর ওই ব্যবসায় অক্সিজেন জুগিয়েছে কচিপাঁঠা। মুরগির ব্যবসায় যে হরিণঘাটা মিট লক্ষ্মীলাভ করে আসছে, সেখানে গত একবছরে লম্বকর্ণের মাংস বিক্রি এতটাই বেড়েছে যে তাজ্জব অফিসাররাই। করোনা সঙ্কটের মধ্যেও ভূরিভোজ থেকে বাঙালির মন টলেনি, বলছে সরকারের মাংস বিক্রির হিসেবই।
ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভ স্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ‘হরিণঘাটা’ ব্র্যান্ডে নানা জিনিস বেচে। তার মধ্যে ‘হরিণঘাটা মিট’ সবচেয়ে জনপ্রিয়। হিসেব বলছে, গত অর্থবর্ষে শুধু মুরগির মাংস বেচেছে ৩,৭৩৪ টন। ২,৯৭৯ টন বেচেছে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, অনেকটাই সরবরাহ করা হয় হোটেলগুলিতে। গত বছরের একটা বড় সময় হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধই ছিল। তাই বিক্রি আনলক পর্বেও তেমন ছন্দে ফেরেনি। তবু বিক্রি এতটা বৃদ্ধির বড় কারণ পারিবারিক চাহিদা বেড়ে যাওয়া।
অচিরাচরিত মাংস বিক্রিতেও যথেষ্ট সুনাম হয়েছে। সেই তালিকায় আছে ডাক, কোয়েল, বন্য খরগোশ, বনরাজা বা টার্কির মাংস। হিসেব বলছে, গত অর্থবর্ষে ১৫৫ টন অপ্রচলিত মাংস বিক্রি করেছে হরিণঘাটা মিট। ঠিক তার আগের বছর তা ছিল মাত্র ৬৫ টন। আবার যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে পর্কের বিক্রি ছিল ৭৫ টন, গত অর্থবর্ষে তা হয়েছে ১০২ টন।
তবু ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি আশা জুগিয়েছে কচি পাঁঠা। বাংলার কালো ছাগলের মাংসই বিক্রি করে লাইভ স্টক কর্পোরেশন। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই মাংসের চাহিদা ছিল মাত্র ৩১ টন। গত বছর তা বেড়ে হয় ১০৯ টন। অর্থাৎ চাহিদা বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌরীশঙ্কর কোনার বলেন, প্রাথমিক হিসেব বলছে, গত অর্থবর্ষে ১১৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। তার আগের বারের তুলনায় ১৭ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু যে বিপুল চাহিদা ছিল, তার জোগান আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দিতে পারিনি। পারলে বিক্রির অঙ্ক আরও বেশি হতো। মাংস ছাড়াও ডিম, মধু বা সর্ষের তেলের মতো কিছু পণ্যও বিক্রি করে কর্পোরেশন। গতবছর এসব পণ্য বিক্রি হয়েছিল ৩.৪ কোটি টাকার।
করোনা প্রতিরোধে বেশি পরিমাণে প্রোটিন খেতে বলেন চিকিৎসকরা। মুরগির মাংস সহজপাচ্য। তাই চাহিদাও বেশি। অন্যদিকে, বাজারদর চড়া থাকলেও হরিণঘাটা মিট কাঁচা মুরগির মাংসের দাম বছরভর ১৪০ টাকা কেজিতে বেঁধে রেখেছে। কচিপাঁঠার মাংসের দামও তুলনায় কম। আর তাতেই ভরেছে সরকারের ভাঁড়ার, বলছেন কর্তারা।