‘প্রতিহিংসা’র ফতোয়া না মেনে মুখ্যসচিবকে ‘রিলিজ’ দিচ্ছে না রাজ্য?
দিল্লি-যাত্রা নয়। আজ, সোমবার মুখ্যসচিব হিসেবেই নবান্নে যাচ্ছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (alapan bandyopadhyay)। যোগ দেবেন যশ পরবর্তী ত্রাণ, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে। নবান্ন (Nabanna) সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যসচিবকে ‘রিলিজ’ দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি রাজ্য সরকারের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার (পার) দপ্তরের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইএএস নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনাল অ্যান্ড ট্রেনিং’কে (ডিওপিটি)। গত ২৮ মে ডিওপিটি’র পক্ষে আন্ডার সেক্রেটারি অংশুমান মিশ্র আলাপনবাবুকে চিঠি পাঠিয়ে আজ, ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে বলেছিলেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মতো সেই চিঠির জবাব দিতে হবে আলাপনবাবুকেও। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার তাঁকে রিলিজ দেয়নি, এই বিষয়টিই সম্ভবত দিল্লিকে জানাবেন তিনি। মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়ার পরেও আনুষ্ঠানিক অবসরের দিন মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে নেওয়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনায় আমলা মহলে তো বটেই, আলোড়ন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। এই জটিল আবর্তেই রবিবার বিকেলে নবান্নে নিজের দপ্তরের আসেন সস্ত্রীক আলাপনবাবু। নিজের দপ্তরে প্রয়োজনীয় কিছু কাজকর্ম সেরে ফিরে যান তিনি। মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্র। প্রত্যাহার করা হবে, এমন কোনও ইঙ্গিতও মেলেনি।
প্রসঙ্গত, ডিওপিটি’র তরফে আলাপনবাবুকে পাঠানো চিঠিতে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস, ১৯৫৪’এর ৬(১) বিধির উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বিধির ভিত্তিতে ক্যাডার পোস্টের রাজ্য সরকারের যে কোনও আধিকারিককে কেন্দ্র সরকার প্রয়োজনে ডেপুটেশনে কাজে নিতে পারে। কিন্তু ওই ধারায় স্পষ্ট করে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের সম্মতি লাগবে। ধারার এই অংশটির ভিত্তিতেই নবান্ন রিলিজ দিচ্ছে না আলাপনবাবুকে। যদি দিল্লিতে কাজে যোগ না দেন, তবে কি আলাপনবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে দিল্লি? এই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। আইএএস মহলের বক্তব্য, অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড আপিল) রুলস, ১৯৬৯-এর সাত নম্বর বিধি অনুযায়ী, কেন্দ্র একতরফা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সহমতে আসতে হবে কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষকেই।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা আকাশপথে পরিদর্শন করার পর বায়ুসেনার কলাইকুন্ডা ঘাঁটিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। সেখানে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মুখ্যসচিবকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ জানিয়ে, দীঘায় চলে যান মমতা। আর পুরো ব্যাপারটাই হয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে। এই ঘটনাটিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চরম অসৌজন্য প্রদর্শন, অপমান বলে প্রচার শুরু করে গেরুয়া শিবির। শনিবার সেই প্রচারের জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অপমানিত হতে হয়েছে তাঁকে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরপর তিনবার অনুমতি নিয়েই তিনি দীঘা গিয়েছিলেন। কলাইকুন্ডার বৈঠক পর্বের সঙ্গেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্যুতেও কেন্দ্রের প্রতি নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা। তাঁর প্রতিক্রিয়া, তাঁকে তো বটেই… ডিস্টার্ব করা হচ্ছে রাজ্যের সচিবালয়কে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই সঙ্গে একজন রাজ্য সরকারের আধিকারিককে বদলি করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের ভূমিকা ঠিক কী হওয়া উচিত, তা স্মরণ করাতে সারকারিয়া কমিশনের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন মমতা। সূত্রের খবর, বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আাঘাত হিসেবে ধরে নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে দেশের বিভিন্ন বিরোধী দল। সেই দলগুলিকে একজোট করে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্যুতে এবার রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।