প্রাণপাত অন্যের জন্য, বৈশাখীরা বাইরের হেঁশেলে

২৩ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণার পরেই রেস্তোরাঁয় ঝাঁপ পড়ে। কিন্তু ওই গৃহবধূদের রান্না বন্ধ হয়নি। কারণ, রাজারহাটের কোয়ারান্টিন সেন্টারে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তাঁদের চারবেলা খাবার দেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় ওই গৃহবধূদের উপরেই।

April 22, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ব্যবসা-বাণিজ্য করার লক্ষ্যে কয়েকজন গৃহবধূ মিলে একটি রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন। রাজারহাটের ইকো স্পেসের উল্টোদিকে। নাম জাগরণী। ভাত, ডাল, চাউমিন, ফিশফ্রাই, চিলিচিকেন ভালোই বিক্রি হচ্ছিল। ২৩ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণার পরেই রেস্তোরাঁয় ঝাঁপ পড়ে। কিন্তু ওই গৃহবধূদের রান্না বন্ধ হয়নি। কারণ, রাজারহাটের কোয়ারান্টিন সেন্টারে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তাঁদের চারবেলা খাবার দেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় ওই গৃহবধূদের উপরেই।
অসময়ে কেবল দু’পয়সা বাড়তি রোজগার নয়, বরং করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে যাঁরা সাহায্য করছেন, তাঁদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাচ্ছেন রাজারহাটের ওই গৃহবধূরা। রাজারহাটের বিডিও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ওই ১২ জন মহিলার জন্য আমরা গর্বিত। বিপদের দিন ওঁরা ঘর ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা বাইরে পড়ে আছেন মানবসেবায়।’


রাজারহাট ব্লকে ৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অনেকগুলো স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। সেই সব গোষ্ঠীর মহিলারা বিভিন্ন হাতের কাজে পারদর্শী। ২০১৭ সালের মে মাসে নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ২ এ ইকো স্পেস আইটি হাবের কাছে একটি রেস্তোরাঁ তৈরি করে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। রেস্তোরাঁটি পরিচালনার জন্য ভার দেওয়া রাজারহাট ব্লক প্রশাসনকে। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা সেটির দায়িত্ব দেন ‘অঙ্গনা’ নামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে।
রাজারহাটের বিষ্ণুপুর, চাঁদপুর, পাথরঘাটা এলাকার কয়েকজন গৃহবধূ, যাঁরা ইতিমধ্যেই কমবেশি রান্নার কাজে পারদর্শী কিংবা রেস্তোরাঁ, হোটেল চালানোর অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরাই একজোট হয়ে ওই গোষ্ঠী তৈরি করেন এবং রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৭ সালের মে মাস থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোটামুটি ছবিটা একই। রোজ সকালে স্বনির্ভর গোষ্টীর সদস্যরা ঘুম থেকে উঠে নিউ টাউন যেতেন। সেখানে মূলত আইটি কর্মী ও গাড়িচালক ভাইদের জন্য দুপুরে ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন স্বাদের ও পদের খাবার বানাতেন।
ছবিটা বদলাল মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে। দেশজুড়ে মারণ ভাইরাসের দাপটে শহরের সব রেস্তোরাঁ বন্ধ হল। একই সঙ্গে নিউ টাউনে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের সেকেন্ড ক্যাম্পাসকে রাজারহাট কোয়ারান্টিন সেন্টার তৈরি করা হল। সেখানে চিকিৎসক ও রোগী ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, সাফাইকর্মীদের একটা বড় দল কাজে লাগলেন। এই মানুষদের দু’বেলা খাবার জোগানের ভার পড়ল জাগরণী রেস্তোরাঁর ওপর। তারামণি, শম্পা, আর্জিনা, পুতুলদের ঘর সংসার ছেড়ে ২৪ ঘণ্টা ঠাঁই হল ‘জাগরণী’তে।
জাগরণীর দায়িত্বে থাকা বৈশাখী সর্দার বলেন, ‘আমাদের সবার বাড়িতেই ছোট বাচ্চা, বয়স্ক মানুষ। তা সত্ত্বেও কঠিন সময়ে নিজেদের স্বেচ্ছাবন্দি করে দিনরাত কাজ করে চলেছি।’ সাবিনা বিবি বলেন, ‘সকাল সন্ধ্যা টিফিন ছাড়াও দুপুর ও রাতের ভাতের মিল বানাতে হয়। প্রতিদিন আমরা দেড়শো লোকের খাবার রান্না করি। কারিগরি ভবন, এনবিসি বিল্ডিংয়ে সেই খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। মূলত কোয়ারান্টিন সেন্টারে যারা কাজ করেন, তাঁরাই খান। রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর কর বলেন, ‘কর্তব্যের খাতিরে ওঁরা যে ভাবে বাইরে পড়ে আছেন এবং জরুরি পরিষেবার লোকদের মুখে অন্ন জোগাচ্ছেন সেটা খুবই প্রশংসার।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen