জলবায়ু পরিবর্তন – বিশ্বের পরবর্তী মহামারি
বিশেষ কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারা বিশ্বের মানুষ। বিশেষত গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে আমেরিকা মহাদেশেও।
জার্মান ওয়াচ নামের একটি সংস্থার গ্লোবাল ক্লাইমেট ইনডেক্স ২০২০-এ এক বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে জাপান, জার্মানি, কানাডা।
জাপান: ২০১৮ সালে জাপান তিনবার বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়েছে। জুলাইতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত দেশটিতে ২০০ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। ক্ষতি হয় ৭০০ কোটি ডলার। জুলাই থেকে আগস্টে তাপদাহে আক্রান্ত হয়ে ৭০ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেপ্টেম্বরের সাইক্লোনে ক্ষতি ছাড়িয়ে গেছে ১২০০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত বছর সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনে ১২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফিলিপাইন্স: গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইন্সের উত্তরাঞ্চলে হানা দেয় ভয়াবহ টাইফুন মাংখুট। ২৭০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টিতে বিপদে পড়েন আড়াই লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৫৯ জন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পুরো বছরে মারা গেছেন ৪৫৫ জন।
জার্মানি: গত বছর ভয়বাহ তাপদাহে জার্মানিতে তাপমাত্রা তার যাবতীয় রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে দুই দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তাপদাহে মৃত্যু হয়েছে ১২৩৪ জনের। বৃষ্টির অভাবে ৭০ ভাগ জমি খরায় আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে ৩৫৪ কোটি ডলারের কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বছর জুড়ে আবহাওয়াজনিত কারণে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২৪৬ জন।
মাদাগাস্কার:গত বছর পরপর দু’টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। সাইক্লোন আভা কেড়ে নেয় ৫১ জনের প্রাণ। পরবর্তীতে ইলিয়াকিমে মারা যান আরো ১৭ জন। সেই সঙ্গে বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন।
ভারত: বন্যার কারণে সৃষ্ট ভূমিধ্বসে গত বছর ভারতের কেরালায় ৩২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হয়েছেন। ২০ হাজার বাড়ি, ৮০ টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মোট ক্ষতি হয়েছে ২৮০ কোটি ডলারের। অক্টোবর আর নভেম্বরে পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে সাইক্লোন তিতলি এবং গাজা। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশটিতে দুই হাজার ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে ২০১৮ সালে।
শ্রীলঙ্কা: জলবায়ু পরিবর্তনে ২০১৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। মে মাসে ভয়াবহ বৃষ্টিপাতে ২০ টি জেলা আক্রান্ত হয়। এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত, ছয় হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বছরজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮ জন।
কেনিয়া:২০১৮ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে দুইগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে কেনিয়াতে। নদীর পানির উচ্চতার কারণে ৪৭ টি কাউন্টির ৪০ টিতেই মানুষ বিপদে পড়েন। ১৮৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হন তিন লাখ ২১ হাজার ৬৩০ জন।
রুয়ান্ডা:ভূমিধসে দেশটিতে গত বছর ২৫ হাজার মানুষ আর পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে কলেরা আর মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ে সেখানে।
কানাডা: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নয় নম্বরে আছে কানাডা। ২০১৮ সালের শুরুতে ১০০ বছরের মধ্যে সেখানকার পূর্বাঞ্চলের তাপমাত্রা নেমে এসেছিল সর্বনিম্ন মাইনাস ৪৫ থেকে মাইনাস ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মে মাসে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বন্যায় চার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। দাবানলে ১৬ হাজার মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। জুলাইতে তাপদাহে কিউবেকে ৯৩ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে বছর জুড়ে ১০৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ফিজি: ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিনটি সাইক্লোনের কারণে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ফিজি-তে ৮ জন মারা গেছেন, বাড়িঘর হারিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।