স্ত্রীর অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে মুকুলের সঙ্গে বঙ্গবিজেপির দূরত্ব আরও বাড়ল? জল্পনা
বিজেপিতে নাম লেখানো ইস্তক মুকুল রায়ের সঙ্গে সে ভাবে বনিবনা হয়নি দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর দু’জনের সেই দূরত্ব আরও বেড়েছে বলেই দলের অন্দরের খবর। ২ মে-র পর দিলীপ ঘোষের ডাকে বিজেপির যে ক’টি ভার্চুয়াল বৈঠক এখন পর্যন্ত হয়েছে, তার একটিতেও দেখা যায়নি মুকুলকে। এর মধ্যে মুকুলের স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে দুই বিজেপি নেতার সম্পর্কের ফাটল রীতিমতো প্রকাশ্যে এসে গেল। যা ধামাচাপা দেওয়ার বদলে দিলীপ নিজেই তাতে ইন্ধন জোগালেন। এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলে আসরে নাবতে হয়েছে সাংসদ লকেট চ্যাটার্জিকেও।
১৪ মে কোভিডে আক্রান্ত হন মুকুল-জায়া। ভর্তি হন ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। করোনামুক্ত হলেও আপাতত বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। বুধবার তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর ঘণ্টাখানেক পরেই হাসপাতালে ছুটে আসেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু এতে কিছুটা বিরক্তিই প্রকাশ করে মুকুল শিবির। মুকুল রায় নিজেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর স্ত্রীকে দিলীপের দেখতে আসার ঘটনাকে কোনও গুরুত্বই তিনি দিচ্ছেন না। মুকুলের কথায়, ‘উনি আমাকে বা অন্য কাউকে বলে তো হাসপাতালে যাননি। কাকে দেখতে গিয়েছিলেন তা-ও জানি না।’ মুকুল-ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘অভিষেক হাসপাতালে আসার পর অনেক বিজেপি নেতার ঘুম ভেঙেছে। তার আগে কেউ খোঁজও নেননি, মুকুলদার স্ত্রী কেমন আছেন!’ যেমন, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে মুকুল-জায়ার খোঁজ নিয়ে এসেছেন। বিজেপির রাজ্য নেতারা কেউ যে এত দিন তাঁর স্ত্রীর খোঁজ নেননি, সে বিষয়ে ঘনিষ্ঠদের কাছে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুকুল।
এদিন বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছেন দিলীপ নিজেই। মুকুলের উপেক্ষায় বেজায় চটেছেন তিনি। দিলীপের মতে, হাসপাতালে যিনি রোগীকে দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। তাঁর কথায়, ‘করোনা রোগীকে কেউ হাসপাতালে দেখতে যায় না। গত বছর আমিও করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। কেউ দেখতে আসেনি। এটাই স্বাভাবিক।’ দিলীপের প্রশ্ন, ‘কাউকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া কি দোষের? এতে দূরত্ব তৈরি হবে কেন! তা ছাড়া, হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করার কী আছে?’
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, অভিষেক বুধবার মুকুলের স্ত্রীকে দেখতে যাওয়ার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে তৎপরতা বেড়েছে। কারণ, পরের দিন সকালেই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুকুলকে ফোন করে তাঁর স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এর পর একে একে বিজেপি নেতাদের আনাগোনা শুরু হয় হাসপাতাল চত্বরে।
এদিকে, মোদীর ফোনের থেকে অভিষেকের হাসপাতালে আসা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর। অভিষেকের ভূয়ষী প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার তিনি বলেছিলেন, ‘বিরোধী দলে থেকেও অভিষেক যে সৌজন্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন, তা ভারতীয় রাজনীতিতে নজিরবিহীন।’ অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রীর তাঁর বাবাকে ফোন করাকে শুভ্রাংশু কার্যত দলীয় কর্তব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী বিজেপির শীর্ষ নেতা। বাবা সেই দলের কর্মী। তাই উনি ফোন করে মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন।’