জোড়া চাপে টিকা নীতি বদল নিয়ে ভাবনা শুরু কেন্দ্রের
কেন্দ্রের কাছে বিনামূল্যে টিকার দাবিতে বৈঠকে বসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। তাঁদের দাবি, ৪৫ বছর ও তার বেশি বয়সিদের মতো ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্যও রাজ্যকে টিকার জোগান দিক কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে, কেন নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের সকলের জন্য টিকা (COVID Vaccine) কিনবে না? এই জোড়া চাপের মুখে এ বার মোদী সরকারের অন্দরেও নতুন করে টিকা নীতি নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, সিরাম, ভারত বায়োটেক টিকার উৎপাদন বাড়ালে এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিষেধক আসতে শুরু করলে জুলাই-অগস্টে টিকার জোগান বাড়বে। তখন কেন্দ্রের এখনকার নীতিতে বদল হতে পারে। তখন কেন্দ্র ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্যও টিকা কিনে রাজ্যকে দিতে পারে। তবে কেন্দ্র রাজ্যের হয়ে টিকা কিনলেও তার খরচ বইবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।
সব রাজ্য চাইছে, কেন্দ্রই সকলের জন্য টিকা কিনে তাদের দিক। বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দাবি তুলেছিলেন। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিরও একই দাবি। চলতি সপ্তাহে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ও অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডিও বাকি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠিতে জানান, কেন্দ্রকেই টিকা জোগানের দায়িত্ব নিতে হবে। এই দাবিতে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এককাট্টা হতে হবে। এ বিষয়ে নবীনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাও হয়েছে। একই মত জগন্মোহনেরও। তাঁদের আগে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও ১১টি বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছিলেন। মমতা পিনারাইয়ের চিঠিকেও স্বাগত জানান।
এ বার কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াতে বিরোধী দলগুলি নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের খবর, খুব শীঘ্রই বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে বা বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকা হতে পারে। মমতার বক্তব্য, “আমি পুরোপুরি এ বিষয়ে বাকিদের সঙ্গে রয়েছি। বিধানসভা ভোটের আগে বলেছিলাম, কেন্দ্রকেই টিকা দিতে হবে। এ বিষয়ে বিরোধী ঐক্য জরুরি।” মমতার সঙ্গে মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেনেরও কথা হয়েছে।
নবীন, জগন্মোহন বরাবরই মুখে বিজেপি, কংগ্রেস থেকে সমদূরত্বের কথা বললেও জাতীয় রাজনীতিতে মোদী সরকারের দিকেই ঝুঁকে থাকেন। তাঁরা বিরোধী-বৈঠকে থাকবেন কি না, সেটা প্রশ্ন। কংগ্রেস শিবিরেও এঁদেরকে নিয়ে সংশয় রয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, নবীন, জগন্মোহন টিকার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন না কেন? একই প্রশ্ন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, তেলঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও-কে নিয়েও। নবীন, জগন্মোহন, পিনারাই ও ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন আলাদা ভাবে বৈঠকে করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সমীকরণ যা-ই হোক না কেন, টিকা নিয়ে বিরোধীদের এই এককাট্টা হওয়া যে ২০২৪-এর আগে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর শামিল, তা বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছে। বিজেপি নেতাদের মত, কেন্দ্র যদি টিকা বিলির দায়িত্ব নেয়, তা হলে এই বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের এই জোট প্রথমেই ভেস্তে যাবে।