ভেগান খাদ্যাভাস কতটা প্রভাব ফেলছে প্রকৃতিতে ও পুষ্টিতে
পরিবেশ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নুন্যতম নিষ্ঠুরতা ও শোষণের জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ভিগানবাদ। স্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রাণীজ খাবার (অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মধু ইত্যাদি), প্রাণীজ পণ্য (যেমন চামড়া, রেশম ইত্যাদি) সম্পূর্ণ বা, যতটা সম্ভব বর্জন করে ভেগানরা। কারণ, তাঁদের বক্তব্য, স্বাভাবিক পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য এইসব প্রাণীদের শোষণ করা অপ্রয়োজনীয় ও অনৈতিক।
অন্যদিকে নিরামিষভোজ – এটা শুধুই খাদ্যাভ্যাস, জীবনব্যবস্থা নয়। নিরামিষভোজীরা প্রাণীজ খাবার পরিহার করে থাকে, অনেকে স্বাস্থ্যগত কারণে অনেকে ধর্মীয় কারণে। বিপুল সংখ্যক নিরামিষভোজীরা দুধ খায়, যা ভেগানরা খায় না। অনেক নিরামিষভোজীরা ডিম খায়, যা ভেগানরা খায় না। অনেক নিরামিষভোজীরা প্রাণীজ পণ্য যেমন চামড়া ব্যবহার করে, যেটা ভেগানরা করে না।
পুষ্টির পক্ষে ভেগানবাদ বেশি উপকারী। কারণ, এটা কোন আধ্যাত্মিক চর্চা না বরং পরিবেশের আপেক্ষিকতাকে স্বীকৃতি দেয়া একটা জীবনব্যবস্থা। যদি বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিজ খাবার যথেষ্ট না হয় তাহলে প্রাণীজ খাবার খাওয়া উক্ত পরিবেশের জন্য অনৈতিক নয় ভেগানবাদে। ফলে প্রতিকূল পরিবেশে ভেগানবাদ বেশী বাস্তবতাসম্মত আর পুষ্টির পক্ষে যায়।
স্বাভাবিক পরিবেশে প্রাণীজ খাবারের কোনও প্রয়োজন নেই, সকল পুষ্টির চাহিদা (প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২ বলি, ওমেগা-৩ বলি) সবই উদ্ভিজ খাবারে পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া, পুষ্টির চাহিদা পূরণ করাই শেষ কথা না, বরং যে উৎস থেকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা হয়েছে সেটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আর অপকারিতাকেও গণনায় আনা প্রয়োজন।
প্রাণীজ সকল খাদ্য উৎসের সাথে রেডিকাল অক্সিডেন্ট, মেটাবলিক এসিডসিস, কার্সিনোজেন জড়িত। ফলে পুষ্টির উৎস থেকে প্রাণীজ খাবার থেকে উদ্ভিজ খাবার গ্রহণ করাই শ্রেয়। নিরামিষভোজী যারা ডিম, দুধ, ঘি, পনির ইত্যাদি খেয়ে থাকে তাদের থেকে তাই ভেগান জীবনব্যবস্থা বেশী পুষ্টির পক্ষে আর বেশী উপকারী।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন জানিয়েছে, পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যা এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে ভীষণ চাপ বাড়ার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যদি টেকসই উপায়ে আরো ৭০ ভাগ বেশী খাদ্য উৎপাদন করত পারে, তবেই এই সঙ্কট এড়ানো সম্ভব।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, মাংসের যোগান বাড়াতে খামারে যে ব্যাপক সংখ্যক গবাদি-পশু পালন হয় এতে করে প্রচুর মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। আর এই গ্যাস জলবায়ুর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। জাতিসংঘের তথ্য মতে, বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি। কিন্তু ২০৫০ সাল নাগাদ তা বেড়ে হবে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি।
এই জনবহুল পৃথিবীতে মাংস বাদ দিয়ে নিরামিষাশী হওয়াকে দায়িত্বশীল খাদ্যাভ্যাস বলে ব্যাখ্যা করছেন ভেগানরা।