৫০ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীর টিকাকরণে উদ্যোগী রাজ্য
গত বৃহস্পতিবার সব বণিকসভার সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর আর বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ নয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে মমতার নির্দেশে রাজ্যের তামাম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের কোভিড টিকাকরণের (covid vaccination) উদ্যোগে ঝাঁপাল সরকার। কেবল বড় শিল্পই নয়, ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রেও সরকার এব্যাপারে আটঘাট বেঁধে নামছে। নির্দিষ্ট শিল্প বা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশপাশি খুচরো কারিগর বা শিল্পীদেরও টিকাকরণে প্রশাসনকে সক্রিয় হওয়ার নিদান দেওয়া হয়েছে। সাকুল্যে এই সংখ্যা ঠিক কত তার কোনও হিসেব সরকারি স্তরে এই মুহূর্তে নেই। তবে ইএসআই সুবিধাভোগী শ্রমিকের (workers) সংখ্যাই প্রায় ২০ লক্ষ। তাই সব মিলিয়ে আনুমানিক হিসেবে সরকার মনে করছে অন্তত ৫০ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী-কারিগর এই প্রচেষ্টার আওতায় আসবে। এই বিরাট কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদপ্তরকে নোডাল এজেন্সির ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। তাই দপ্তরের প্রধানসচিব রাজেশ পাণ্ডে সব জেলাশাসককে ৫ জুন একটি বিস্তারিত নির্দেশনামা পাঠিয়েছেন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য।
সেই অনুযায়ী প্রত্যেক জেলা শিল্পতালুকের জিএম এই কর্মসূচির নোডাল অফিসার চিহ্নিত হয়েছেন। জেলার শিল্পসংস্থা, চেম্বার অব কমার্স, মালিক সংগঠন প্রভৃতির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এই টিকা কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করতে হবে। ঠিক হয়েছে, শিল্পসংস্থাগুলিতেই টিকার জায়গার বন্দোবস্ত করতে হবে। সেখানে রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাকসিনেশন ও পোস্ট অবজার্ভেশন এবং অপেক্ষমান কর্মীদের জন্য ঘর বা এরিয়া চিহ্নিত করা দরকার। নাম নথিভুক্তকরণের জন্য দু’টি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার এবং দু’জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে একজন ভ্যাকসিনেটর (যিনি টিকা দেন) দিনে ২০০ জনের বেশিজনকে যেন টিকা না দেন। সেটা দেখবেন নোডাল অফিসাররা। সেইমতো পুরো তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন পাণ্ডে সাহেব।
নির্দিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান বা অফিসের বাইরে থাকা ক্ষুদ্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক লক্ষ খুচরো কারিগর, খাদি কর্মী, তাঁতি প্রভৃতির জন্য নিকটস্থ ভ্যাকসিনেশন সেন্টারকেই বেছে নিতে বলা হয়েছে। এজন্য জেলা ও ব্লক স্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্ভাব্য টিকা প্রাপকদের নামধাম সংগ্রহের কাজ চালাতে হবে। সরকারি টিকাকেন্দ্র তাদের টিকাকরণের জন্য স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে। তবে নাম নথিভুক্তি এবং টিকা জোগাড়ের কাজ শেষ করে সেই তথ্যভাণ্ডার রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প দপ্তরের কাছে পাঠিয়ে এব্যাপারে চূড়ান্ত সবুজসঙ্কেত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের।
প্রধানসচিবের তিনপাতার নির্দেশে গোটা উদ্যোগ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হলেও টিকার খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। যদিও দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রের কর্মীদের টিকার খরচ জোগাবে মালিক বা তাঁদের সংগঠন। আর খুচরো শিল্পী-কারিগরদের টিকা দেওয়া হবে সরকারি স্তরে। তবে মালিকরা খরচ দিলেও টিকা জোগাড় বা তা দেওয়ার জন্য যাবতীয় বন্দোবস্ত সরকারই করবে।