বিনামূল্যে টিকার খরচ ৭০ হাজার কোটি টাকা, আরবিআইয়ের দ্বারে কেন্দ্র
কোথা থেকে আসবে ভ্যাকসিনের ৭০ হাজার কোটি টাকা? প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাগুলিকে অর্ডার দেওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকে যতটা তৎপরতা শুরু হয়েছে, সেরকমই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অর্থমন্ত্রকেও। যদিও মন্ত্রকের আশ্বাস অর্থের সঙ্কট নেই। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (reserve bank) প্রদান করা ৯৯ হাজার কোটি টাকার ডিভিডেন্ড রয়েছে সরকারের ঘরে। ওই টাকাই আপাতত ভ্যাকসিনের জন্য ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ, গৌরী সেন সেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে পৃথক সংস্থানও খুঁজতে হবে।
এই বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিনের (Covid Vaccine) টাকার জন্য তাই বিকল্প ভাবনা শুরু হয়েছে সরকারের অন্দরে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৪ কোটি মানুষের অন্তত একবার টিকাকরণ হয়েছে। কিন্তু দুটি ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে এরকম সংখ্যা অনেক কম। সেই কারণে দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দিতে এখন সর্বাগ্রে দরকার প্রচুর সাপ্লাই। সেই লক্ষ্যে করতে হবে অর্থ বরাদ্দও। দেশের সকলে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবে, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই মঙ্গলবার কেন্দ্র ৪৪ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছে। ৩০ শতাংশ অগ্রিম অর্থও দেওয়া হয়েছে দুটি সংস্থাকে।
অর্থমন্ত্রক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতবাসীকে সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন দিতে খরচ হবে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার সংস্থান কোথা থেকে হবে এটাই এখন সবথেকে বড় চিন্তার বিষয় অর্থমন্ত্রকের। বাজেটে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘোষণার পরও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন কেন পাওয়া যাচ্ছে না, এই মর্মে বিরোধীরা আক্রমণ করেছে সরকারকে। যখন শুধু ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি চলছিল, তখনই জোগান পর্যাপ্ত ছিল না। এরপর বিনামূল্যে প্রায় সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার টাকা কোথা থেকে আসবে? অর্থমন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া ৯৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি ডিভিডেন্ডের উপরই নির্ভর করছে। আপাতত ওই অর্থই ব্যয় করা হবে।
এর উপর যেহেতু প্রধানমন্ত্রী সোমবারই আবার গরিব কল্যাণ যোজনার সময়সীমাও বাড়িয়েছেন নভেম্বর মাস পর্যন্ত, সেই কারণে, আরও টাকার প্রয়োজন। অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা দরকার আগামী ৬ মাসের জন্য। সেই টাকাও বরাদ্দ করতে হবে। এই কারণেই সরকার আবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার থমকে থাকা বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়ায় গতি আনতেও ঝাঁপাচ্ছে। ইতিমধ্যেই নীতি আয়োগ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক এবং ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের নাম প্রাথমিকভাবে বিলগ্নিকরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে জানা যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রক সাধারণত অতিরিক্ত অর্থবরাদ্দ করতে হলে সংসদের অধিবেশনে সাপ্লিমেন্টারি ডিমান্ডস ফর গ্র্যান্টস অনুমোদন করায়। কিন্তু আপাতত সেই প্রক্রিয়ার দরকার হচ্ছে না। তবে শীতকালীন অধিবেশনে অতিরিক্ত অর্থবরাদ্দ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার যে ঘোষণা করেছেন তাতে যত ভ্যাকসিন অর্ডার করার কথা ভাবা হয়েছে, সেই তালিকায় বিদেশি ভ্যাকসিন থাকছে না। কোভ্যাকসিন, কোভিশিল্ড এবং নতুন যে ভ্যাকসিন আসতে চলেছে সেই বায়ো-ই ভ্যাকসিনের কথাই ভাবা হয়েছে।
এদিকে, বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বিভিন্ন টিকার সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। জানানো হয়েছে, কোভিশিল্ডের দাম নিতে হবে সর্বোচ্চ ৭৮০ টাকা। কোভ্যাক্সিনের দাম ধার্য হয়েছে ১৪১০ টাকা। আর স্পুটনিক ভি টিকার সর্বোচ্চ দাম ১১৪৫ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।