ভ্যাকসিন নষ্ট করলে মিলবে না পর্যাপ্ত ডোজ, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বিতর্ক
বিনামূল্যে রাজ্যকে ভ্যাকসিন (Covid Vaccine) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বেশ কিছু শর্ত আরোপ করল কেন্দ্র। জানিয়ে দেওয়া হল, সবাইকে হাত খুলে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। যেসব রাজ্যে ভ্যাকসিন নষ্ট বা টিকাকরণে গতি কম, তাদের পর্যাপ্ত ডোজ মিলবে না। কোথায় কত জনসংখ্যা, তার মধ্যে কতজন ১৮ ঊর্ধ্ব, কত কো মরবিড, রাজ্যগুলিকে ফ্রি ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে এগুলি দেখা হবে বলেই জানিয়ে দিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আগের চেয়ে কমলেও এখনও সার্বিকভাবে গড়ে দেড় শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে কোভিশিল্ডের গড় ডোজ নষ্ট হচ্ছে ১ শতাংশ। কোভ্যাকসিনের ৪ শতাংশ।
ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কেন্দ্রের উচ্চপর্যায়ের কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ বিনোদকুমার পল বলেন, কোভিশিল্ডের একটি ভায়ালে ১০টি ডোজ থাকে। কোভ্যাকসিনও এখন ২০-এর বদলে ১০ ডোজের ভায়াল করে দিয়েছে। তাই আশাকরি নষ্টের হারও কমবে। আগামী ২১ জুন ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে’র দিন থেকে দেশজুড়ে সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রে ভ্যাকসিনের পুরোটাই সরবরাহ করবে কেন্দ্র।
রাজ্যকে আর ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য সরাসরি কোম্পানির থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রক মঙ্গলবার সরকারিভাবে জানিয়েছে, পাঞ্জাব, কেরল, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ত্রিপুরার মতো ১৩টি রাজ্য গত এক মাস ধরে এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছে। এছাড়া ভ্যাকসিনের উৎপাদন দেখেই নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধের বিষয়টি উল্লেখ নেই কেন? জানতে চাওয়ায় মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগে নিজে কিনবেন বলেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। পরে মত বদলেছেন।
নতুন ব্যবস্থায় কেন্দ্র যাবতীয় ডোজ কিনলেও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য রাজ্যগুলি নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বিশেষত, ১৮ ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রে। তবে বয়ষ্কদের যেহেতু সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি, বিশেষত কো মরবিডদের, তাই ভ্যাকসিন শিডিউল তৈরিতে ৪৫ ঊর্ধ্বদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, যাঁরা দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।
ডাঃ বিনোদ কুমার পল বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা ৫৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডোজ হাতে পাচ্ছি। জুলাই মাস পর্যন্ত এতেই চলবে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের জন্য কোভিশিল্ডের ২৫ কোটি এবং কোভ্যাকসিনের ১৯ কোটি ডোজ ইতিমধ্যেই বুক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিমও দেওয়া হয়েছে। ফলে ভ্যাকসিনের অভাব হবে না। কেন্দ্র প্রতি ডোজ ১৫০ টাকাতেই কিনবে। সরকারি ফ্রি টিকা কর্মসূচিতে আপাতত ‘কোভ্যাকসিন’ এবং ‘কোভিশিল্ড’ই দেওয়া হবে। রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-ভি’ নয়। যদিও স্পুটনিক-ভিকে ইমার্জেন্সি ইউজের ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া।
ডাঃ পল জানান, স্পুটনিক যেদিন ভারতে তৈরি হবে, তখনই তা দেশের ফ্রি টিকাকরণ কর্মসূচিতে যুক্ত হবে। বিদেশ থেকে আনা ডোজ নয়। তবে প্রাইভেট হাসপাতাল চাইলে আমদানি করা স্পুটনিক-ভি দিতেই পারে। কোনও বাধা নেই।
এদিকে, গোটা দেশে লাগাতার সংক্রমণ কমছে। দু’মাস পরে দৈনিক সংক্রমণ লক্ষের নীচে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তা হয়েছে মাত্র ৮৬ হাজার ৪৯৮। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেছেন, ভবিষ্যৎ ঢেউ ঠেকাতে আগামী কয়েক মাস ভিড় এড়াতেই হবে। কোভিড বিধি মানতে হবে। সুস্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৯৪.৩ শতাংশ। সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার হার ৬.৩ শতাংশ। বিহার সরকার এদিন জানিয়েছে, ৯ জুনের পর বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।