চিংড়ি শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করে লাভের মুখ দেখল বাংলা
গত বছর করোনা সংক্রমণের গোড়া থেকে থমকে ছিল বিশ্ব। মার খেয়েছিল আন্তর্জাতিক ব্যবসাও। কিন্তু তারই মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলার চিংড়ি। লকডাউন আর করোনার বছরে এ রাজ্য থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার চিংড়ি পাড়ি দিয়েছে বিদেশে। তার সিংহভাগ কিনেছে চীন, আমেরিকা আর জাপান। চিংড়ির সঙ্গেই যোগ্য সঙ্গত করেছে শুঁটকিও (Dry Prawn)।
বিদেশের বাজারে বাংলার চিংড়ির কদর বরাবরই ভালো। বাগদা এবং ভেনামি চিংড়িই পছন্দের তালিকায় সবার আগে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের আওতায় থাকা দি মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তথ্য বলছে, ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মোট হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ৫২ হাজার ৪৯৯ টন। ভারতীয় মুদ্রায় তার দর প্রায় ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এরপরই জায়গা করে নিয়েছে শুঁটকি।
১২ হাজার ৭১৩ টন শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে এরাজ্য থেকে। তার থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২১১ কোটি টাকা। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এর সিংহভাগই গিয়েছে বাংলাদেশে। ভালো ব্যবসা করেছে ‘কাটল ফিস’ও। এদেশে এই মাছ তেমন জনপ্রিয় না হলেও বাইরের দেশে এর চাহিদা প্রচুর। ৬ হাজার ৭৫০ টন রপ্তানি হয়েছে এই মাছ। প্রায় ১২০ কোটি টাকার কাঁকড়া রপ্তানি করেছে পশ্চিমবঙ্গ, বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য। দি মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক কর্তা বলেন, গত অর্থবর্ষে এই রাজ্য থেকে যে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ এবং জলজ সামগ্রী বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, তা থেকে এখানকার বাসিন্দারা যা আয় করেছেন, তা প্রায় ৪৯ কোটি মার্কিন ডলারের সমান। করোনাকালে এই বিপুল বিক্রিবাটা অত্যন্ত সদর্থক। আমাদের আশা, চলতি বছরেও এই সাফল্য বজায় থাকবে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কে এস শ্রীনিবাস বলেন, লকডাউন ও চাহিদা কম থাকার কারণে গত অর্থবর্ষের গোড়ার দিকে তেমন চাঙ্গা ছিল না আন্তর্জাতিক বাজার। কিন্তু শেষ তিন মাসে যে বিপুল সাফল্য এসেছে, তা অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে রপ্তানির হারকে। ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ১০.৮৮ শতাংশ কমেছে ঠিকই। কিন্তু টাকার নিরিখে তা কমেছে মাত্র ৬.৩১ শতাংশ।
এরাজ্যের চিংড়ির চাহিদা জাপানে যথেষ্ট বেশি। এখানকার চিংড়িতে অ্যান্টিবায়োটিক মেশানো হয়, এই অভিযোগ এক সময় তাদের দিক থেকে উঠত। কিন্তু সম্প্রতি চিংড়ির নমুনা পরীক্ষার পর তারা জানিয়ে দেয়, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপারে তারা চোখ বুজে ভরসা করবে চিংড়িকে। আর তাতেই আশার আলো দেখছে বাংলা। সে দেশে চিংড়ির রপ্তানি বাড়লে মাছের রপ্তানির সামগ্রিক চেহারা এবার আমূল বদলে যাবে, বলছেন বিভাগীয় কর্তারা।