হাওড়া শহরে আবার ফিরছে কন্টেইনমেন্ট জোন
সারা রাজ্যের সঙ্গে হাওড়াতেও রাশ টানা গিয়েছে সংক্রমণে। তবে এখনও এই জেলায় প্রতিদিন গড়ে নতুন করে কোভিডে (Covid 19) আক্রান্ত হচ্ছেন ২০০ থেকে ২৫০ জন। এবার সংক্রমণের হারকে আরও নীচে নামাতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে কন্টেইনমেন্ট জোন (Containment zone)। মঙ্গলবার কোভিড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে নতুন নির্দেশ জারি করেছে নবান্ন। তাতেই কন্টেইনমেন্ট জোনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী এদিন চার দফা নির্দেশিকা জারি করে বলেছেন, বিধিনিষেধের কারণে রাজ্যে করোনা গ্রাফ এখন নিম্নমুখী। তবে এখনই এব্যাপারে শিথিলতা দেখাতে রাজি নয় সরকার। স্থানীয় স্তরে কোথাও বা কোনও এলাকায় সংক্রামিতের সংখ্যা বাড়লে সেই এলাকাকে কন্টেইনমেন্ট বা মাইক্রো কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে দেখতে হবে। সেখানে কঠোরভাবে কোভিড প্রোটোকল অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বিধি ইত্যাদি মানতে হবে। সঠিকভাবে টেস্টিং, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং করতে হবে। কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সব দপ্তরকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বৈঠক করে সংক্রমণের বিষয়ে আপডেট থাকতে হবে।
এই সময়ের মধ্যে হাওড়া শহরে তো বটেই, গ্রামাঞ্চলের যে সব জায়গায় কোভিড বেশি ছড়াচ্ছে, সেই সব জায়গাকে চিহ্নিত করে নবান্নের মির্দেশ মতো কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। এই বিশেষ জোন ঘোষণা করার অর্থ, ওই এলাকায় বিধিনিষেধ আরও কড়া হবে। সেসব এলাকায় মানুষের যাতায়াত যেমন নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তেমনই দোকানপাট খোলা-বন্ধ করা, জমায়েত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কিছু অতিরিক্ত বিধিনিষেধ জারি করা হবে। দু’-একদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের তরফে এই কন্টেইনমেন্ট জোনগুলি ঘোষণা করে নজরদারির আওতায় আনা হবে। রাজ্যের যে সব জেলায় এখনও সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে, সেই জেলাগুলিতে একজন করে উচ্চপদস্থ আধিকারিককে নিয়োগ করে সংক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই মতো হাওড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সঞ্জয় থার্ডের সঙ্গে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন, পুলিস, হাওড়া পুর-প্রশাসনের কর্তাদের বৈঠক হয়।
হাওড়া পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় এদিন বলেন, কোন কোন এলাকাকে কন্টেইনমেন্ট জোন করা হবে, সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কিছু এলাকা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে। শীঘ্রই তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং পুলিস ওই সব এলাকাকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে নজরদারির আওতায় আনবে।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ‘সুপার স্প্রেডার’ বলে চিহ্নিত জনসমষ্টিকে আরও দ্রুত টিকাকরণ করতে হবে। এই ‘সুপার স্প্রেডার’ গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে হকার, পরিবহণ কর্মী, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, ব্যাঙ্ককর্মী, মাছ ও সব্জি বিক্রেতারা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নিতাই মণ্ডল বলেন, হাওড়ায় এমন লোকজনের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৯ হাজার। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ দ্রুত শেষ করতে রাজ্য সরকারের কাছে জেলা প্রশাসন টিকার জোগান বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে। অরূপবাবু জানান, হাওড়া পুরসভার ১৭টি পুর-প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে জোগান বাড়লে ওই সব কেন্দ্রে আরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে।
জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, যত দ্রুত সম্ভব টিকাকরণের আওতায় আনতে হবে সব মানুষকে। তাহলে করোনার তৃতীয় ঢেউ এলেও সেক্ষেত্রে লড়াই করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। অনেক মৃত্যুও ঠেকানো যাবে। তবে টিকাকরণ নিয়ে কিছু অশান্তি, ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ভোররাত থেকে লাইন দিয়েও অনেকে টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া এখন বিশেষ গোষ্ঠীভিত্তিক টিকাকরণ চলছে বলে এর বাইরে থাকা বয়স্ক বা প্রৌঢ়রা টিকা নিতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন। এদিন জেলা ও রাজ্যের এই আধিকারিকরা বৈঠকের পর বালিটিকুরি করোনা হাসপাতালে গিয়ে সেখানকার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন।