পরাজয় দমাতে পারেনি প্রাক্তন মন্ত্রীকে, দলকে চাঙ্গা করতে ময়দানে রবি
কোচবিহারে (Coochbehar) ফের ঘুরে দাঁড়াতে তৈরি হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। জেলার ন’টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এবারের ভোটে সাতটি খোয়ালেও এর পিছনে প্রধান কারণ যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছিল, এমনটাই মনে করে রাজ্য নেতৃত্ব। তাই কোচবিহারের জেলা নেতৃত্বকে দলের নির্দেশ, আরও বেশি করে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। আর সেই কাজে গ্রাম, শহরের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মাঠে নামানো হয়েছে জেলার পোড়খাওয়া বর্ষীয়ান নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে (Rabindranath Ghosh)।
পরপর দু’বার জয়ী হওয়ার পর এবার নাটাবাড়ি কেন্দ্রে হেরে গেলেও এতটুকু দমেননি তিনি। বিধানসভা নির্বাচনে হারের পরপরেই জেলার বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় সংগঠনকে জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, আগামীতে জেলায় ছ’টি পুরসভার নির্বাচন রয়েছে। দিনহাটায় বিধানসভা উপনির্বাচন হবে। দলের কর্মী হিসেবে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে তিনি তাই সংগঠন চাঙ্গা করার কাজ করে চলেছেন।
রবিবাবু বলেন, লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। আমরা দলের কর্মী। দলের কর্মীদের নিয়েই আগামী দিনে চলতে হবে। সামনেই পুরসভা ভোট, বিধানসভা উপনির্বাচনও আছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই সংগঠনকে মজবুত করা হচ্ছে। গত ১০ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ছোট ছোট কর্মিসভা করছি। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই আমি এসব কাজ শুরু করছি।
দলের অপর বর্ষীয়ান নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, জেলায় নিজেদের মধ্যে অনৈক্যই হারের আরও একটি কারণ। তবে আগামী দিনে কী হবে তা রাজ্য নেতৃত্বের উপরে নির্ভর করছে। আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক। আমাদের যা নির্দেশ দেওয়া হবে সেভাবে কাজ করব।
বিধানসভা নির্বাচনের কিছুদিন পর থেকেই দলের সাংগঠনিক কাজে নেমে পড়েছেন রবিবাবু। ইতিমধ্যেই তিনি তুফানগঞ্জ, চিলাখানা, দেওয়ানহাট, নাটাবাড়ি-১ প্রভৃতি জায়গায় কর্মিসভা করেছেন। তাঁর বাড়িতে নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের ১০টি অঞ্চলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মীরা তাঁর বাড়িতে এলে তাঁদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সংগঠনের কোথায়, কী ঘাটতি রয়েছে, সেসবও ওই সব বৈঠকগুলিতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রবিবাবু জেলা সভাপতি ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই জেলায় সংগঠন বিস্তার লাভ করেছিল। তাঁর নেতৃত্বেই কোচবিহারের ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে আটটিতে তৃণমূল অতীতে জয়লাভ করেছিল। নাটাবাড়ি কেন্দ্র থেকে পরপর দু’বার জয়ী হয়ে মন্ত্রিসভায় তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেইসঙ্গে জেলা সভাপতির দায়িত্বভারও তাঁর কাঁধেই ছিল। যেহেতু প্রায় নিজে হাতে জেলায় তৃণমূলের সংগঠনকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন, তাই জেলাকে কার্যত তিনি হাতের তালুর মতোই চেনেন। কিন্তু, এই সমস্ত অঙ্কই ধাক্কা খায় গত লোকসভা নির্বাচনে।
২০১৯’ র লোকসভা ভোটে কোচবিহারে দলের ভরাডুবি হয়। বিজেপি ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে এখান থেকে জয়লাভ করে। আর এরপরেই জেলা সভাপতির পদ থেকে রবিবাবুকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে দল দায়িত্ব দেয়।