উত্তরবঙ্গ পৃথক রাজ্য? সাংসদের দাবিতে অস্বস্তিতে দল, ক্ষুব্ধ বিভিন্ন জনগোষ্ঠী
পৃথক রাজ্যের দাবি উসকে নিজেদেরই বিড়ম্বনা বাড়ালেন বিজেপির (BJP) উত্তরবঙ্গের কয়েকজন সাংসদ-বিধায়ক। সরকারের স্বীকৃতি তো পরের কথা, নিজেদের দলই তাদের দাবি উড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, এই দাবির সঙ্গে কামতাপুর, গ্রেটার কোচবিহার বা গোর্খাল্যান্ডের সম্পর্ক নেই বলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর রোষ ডেকে এনেছেন তারা।
বিজেপিতে সামনে এসেছে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবিদার দলীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরোধও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) মঙ্গলবারই টুইটে জানিয়ে দিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গে আলাদা রাজ্য গঠনের দাবির সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। দলের রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বুধবার আরও স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৈরি করে গিয়েছেন। তার সেই সৃষ্টির কোনও পরিবর্তন আমরা করব না।’
কোচবিহারে এদিন তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে জনপ্রতিনিধিদের চাপ আরও বাড়ল। সায়ন্তনের বক্তব্য, ‘রাজ্য ভাগ আমরা কোনওদিন মেনে নেব না। কাউকে ভাগ করতেও দেব না।’ যদিও দলীয় জনপ্রতিনিধিরা এমন দাবি করছেন বলে তিনি মানতে চাননি। বিজেপির রাজ্য কমিটির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের কোনও বিধায়ক বা সাংসদ এমন দাবি করেননি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
রাজ্য নেতৃত্বের একেবারে এই উলটো সুরের মুখে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা বুধবার যে মন্তব্য করেছেন, তাতে আবার দলের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ বনাম উত্তরবঙ্গের মতপার্থক্য বেআব্রু হয়েছে। বারলা বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গ কোনওদিন চাইবে না উত্তরবঙ্গ পৃথক রাজ্য হোক। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে সাধারণ মানুষের আওয়াজ উঠেছে পৃথক রাজ্য গঠন করা হোক। আমাদের মেরে তাড়াচ্ছে। টানা বঞ্চনা থেকে সাধারণ মানুষ চাইছেন উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অথবা পৃথক রাজ্যে পরিণত করা হোক।’
দলের রাজ্য সভাপতি যে এই দাবিতে জল ঢেলে দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করায় অবশ্য গুটিয়ে যান আলিপুরদুয়ারের সাংসদ। তাঁর তখন বক্তব্য, ‘এনিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমি উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের দাবির কথা বলেছি।’ অন্যদিকে, আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করলেও তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কামতাপুর বা গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করেন না বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে ক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী। কামতাপুর পিপলস পার্টির (ইউনাইটেড) বক্তব্য, এমন মন্তব্য হাস্যকর ও ভুলভাল। কেপিপি (ইউনাইটেড)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বর্মন বলেন, ‘কামতাপুর রাজ্যের দাবি কামতাপুর পিপলস পার্টিই প্রথম থেকে করে আসছে। এখন কোন দল কী বলল না বলল, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা ভূলভাল মন্তব্য করছে।’ যদিও বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য আছে কেপিপি শিবিরেও।
গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষ নেতা বংশীবদন বর্মন বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের আট জেলা নিয়ে কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে ১৯৯৬ থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। এখন বিজেপি একই কথা জানাচ্ছে। কিন্তু কামতাপুরির দাবিকে সমর্থন করছে না। কামতাপুরিরা কী বলল, বিজেপির মালতী রাভা কী বললেন, সেটা তাদের ব্যাপার।” বংশীবদনরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের বক্তব্য, তারা নতুন করে কোনও রাজ্য চাইছেন না। রাজ আমলের পুরোনো কোচবিহার রাজ্যের পুনরুদ্ধার চাইছেন মাত্র। গ্রেটারের অপর গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা অনন্ত মহারাজ অবশ্য বিজেপির দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।