গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার বঙ্গ বিজেপি, নজরদারি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
এক রাজ্য নেতার দাবি, আলোচনায় কাজ হয়েছে। তাতে কি অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটেছে? তেমন ছবি কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না।
Authored By:

ভোটপর্বে বঙ্গ বিজেপির মধ্যে দু’টি বিভাজন বাজার চলতি ছিল—আদি ও দলবদলু। ভোট মিটেছে, কিন্তু বিভাজন মেটেনি। বরং বেড়েছে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে ক্ষোভ। নিচুতলার সেই ক্ষোভ আপাতত নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনকী সঙ্ঘের নেতাদেরও লাগাতার গালমন্দ করছেন বুথ পর্যায়ের কর্মীরা। আর এই প্রবণতা ধীরে ধীরে ছড়াচ্ছে প্রথম সারির নেতাদের মধ্যেও। যা মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিকে। আগামী বছর ছ’টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর তিন বছরে মোদি সরকারের ভাগ্যপরীক্ষা। কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই ‘দলবিরোধী’ কার্যকলাপে লাগাম টানা অসম্ভব। তাই কঠিন পথেই হাঁটল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপির (BJP) শীর্ষ ‘কর্তা’রা ঠিক করেছেন, এখন থেকে বঙ্গ নেতৃত্বের প্রত্যেক পদাধিকারীর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং তাঁদের সঙ্গে জড়িতদের উপর চলবে কড়া নজরদারি। তালিকায় রয়েছেন দিলীপ ঘোষ সহ রাজ্যের সব পদাধিকারী এবং জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। দলবিরোধী কোনও পোস্ট চোখে পড়লেই নেওয়া হবে পদক্ষেপ। দিলীপবাবু নিজেই বলেন, ‘ভোটের আগে আমাদের বেশ কিছু হিতৈশী তৈরি হয়েছিল। তারাই বদনাম করছে। এমন দলবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে দিল্লির এক নেতা বলেন, ‘২ মের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার দলবিরোধী পোস্ট ছড়িয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, এর সঙ্গে দলীয় অনুশাসন এবং শৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িয়ে।’ তাঁর বক্তব্য, পোস্টগুলি খতিয়ে দেখতে গিয়ে নজরে আসছে, সেগুলির অধিকাংশই বাজারে এসেছে ‘ফেক প্রোফাইল’ থেকে। অথচ, সেই প্রোফাইলেরই ফ্রেন্ড লিস্টে রয়েছেন প্রথম সারির বিজেপি নেতারা! কেন্দ্রের ওই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের দাবি, আমাদের হাতে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে, রাজ্য এবং জেলা স্তরের বহু নেতা নিচুতলার কর্মীদের দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কুরুচিকর পোস্ট করাচ্ছেন। কিন্তু ফেক প্রোফাইল ‘অদৃশ্য শত্রু’। তাই বিকল্প উপায় নেওয়া হয়েছে। সেটা কেমন? দিল্লির ওই নেতা বলেন, প্রথমে সন্দেহজনক ফেক প্রোফাইলের ফেন্ড লিস্টে থাকা পদাধিকারীদের তালিকা তৈরি হবে। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টকে আন-ফ্রেন্ড করার নির্দেশ যাবে তাঁদের কাছে। ৩ দিনের মধ্যে আন-ফ্রেন্ড না হলে শো-কজ। আর তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে সাসপেন্ড করা হবে।
তবে দলবিরোধী কথা বললেও দলবদলু একাধিক হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে এখনই কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে না গেরুয়া পার্টি। সূত্রের দাবি, তঁাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যরা। বিষয়গুলি নিয়ে বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ এবং জাতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য। বিজেপির ভাবটা স্পষ্ট, আলোচনায় সমস্যা মিটলে জটিলতা বাড়িয়ে কী হবে? এক রাজ্য নেতার দাবি, আলোচনায় কাজ হয়েছে। তাতে কি অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটেছে? তেমন ছবি কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না। ওই নেতা অবশ্য জানান, দু’মাসে এই ‘সামাজিক’ অন্তর্ন্দন্দ্ব মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।