মোদী জমানায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি, বলছে বিদেশি সংবাদমাধ্যম
কর্মসংস্থান থেকে আর্থিক বৃদ্ধি — প্রতিশ্রুতি আর আস্ফালনই সার। নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) জমানার সাত বছরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি। ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লির মসনদ দখলের পর ২০১৯ সালে আরও শক্তিশালী সরকার গঠন। কিন্তু, মোদীর শাসন দেশবাসীকে হতাশ করেছে। আর করোনা মহামারী দেশের কঙ্কালসার অবস্থাকে প্রকট করে দিয়েছে। জিডিপি থেকে চাকরি, আমদানি থেকে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় থেকে কৃষি উন্নয়ন — সব ক্ষেত্রেই মোদী সরকার ব্যর্থ। এমনটাই বলছে বিদেশি সংবাদমাধ্যম।
বিবিসি মোদী সরকারের সাত বছরের হাল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে এশিয়ার এই তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির (Economy) দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা সাত মাপকাঠিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নিম্নগামী গ্রাফ সত্ত্বেও ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত পাঁচ লক্ষ কোটির অর্থনীতিতে পৌঁছে যাবে বলে বুক ঠুকে দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, আসলে তা দিবাস্বপ্ন। তথ্য বলছে, আগামী চার বছরের মধ্যে মেরেকেটে ভারত ৩ লক্ষ কোটির অর্থনীতিতে পৌঁছতে পারে। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারীর জেরে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি ডলার অর্থব্যবস্থা থেকে উবে গিয়েছে।
মোদী যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন দেশের জিডিপির হার ছিল ৭-৮ শতাংশ। সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসে তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস ৩.১ শতাংশ। এর জন্য নোটবাতিলকে দায়ী করা হয়েছে। একই অবস্থা দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও। ক্ষমতায় আসার আগে কোটি কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ সালে বেকারত্বের হার কমে হয়েছে মাইনাস ৬.১ শতাংশ, যা গত ৪৫ বছরে সর্বনিম্ন। এমনকী, শুধুমাত্র ২০২১ সালে আড়াই কোটি দেশবাসী চাকরি হারিয়েছেন।
দেশীয় উৎপাদনকে পাখির চোখ করে প্রধানমন্ত্রী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, লাল ফিতের ফাঁস থেকে বেরিয়ে বৃহৎ উৎপাদক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ভারত, বাড়বে রপ্তানি। কিন্তু, ঢক্কানিনাদই সার। গত পাঁচ বছরে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কর্মসংস্থানের চিত্র ক্রমশ খারাপ হয়েছে। সাত বছরে রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা কিছুতেই ছুঁতে পারছে না মোদীর সরকার। আয়ের থেকে ব্যয় বাড়তে থাকায় ভাঁড়ার ক্রমশ শূন্য হচ্ছে। বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি। ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য কৃতিত্ব দাবি করেন মোদী। জনধন যোজনায় গরিবদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার দাবি করে সরকার। কোটি কোটি গরিব পরিবার নাকি ব্যাঙ্কে খাতা খুলেছে। কিন্তু, সময় যত এগিয়েছে, ততই সেই সমস্ত অ্যাকাউন্ট অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে।
সবথেকে খারাপ অবস্থা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, করোনা মহামারী যা সামনে এনে দিয়েছে। অতীতের সরকারগুলির মতোই মোদী সরকারও স্বাস্থ্যখাতে খুব কম অর্থ ব্যয় করে। ফলে, ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবা আমেরিকার মতোই ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্যবিমা ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করলেও কোভিড কালে তা বেশিরভাগ অব্যবহৃতই রয়ে গিয়েছে। এছাড়া ভারতে যতজন কাজ করেন, তার অর্ধেক কৃষিক্ষেত্রে কাজ করেন। অথচ, জিডিপিতে তার প্রভাব খুব সামান্য। এরজন্য প্রয়োজন বাজার কেন্দ্রীয় আইন। গত বছর সেইমতো তিনটি কৃষি আইন পাশ হলেও দীর্ঘ কৃষক বিক্ষোভে তা আটকে রয়েছে। মোদী কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও তা বাস্তবের মুখ দেখেনি।