বিজেপির বঙ্গভঙ্গের দাবি নিয়ে নেটমহলে হাসির বন্যা
তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার ‘পৃথক রাজ্য’ (separate state) চাই—গোটা সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে (social media) উঠেছে ‘ট্রোল’-এর ঝড়। কেউ নিজের জেলাকে আলাদা রাজ্য বানানোর দাবি তুলছেন, কেউ বা নিজের পাড়াকে। রাজধানীও নির্বাচন করে ফেলেছেন অনেকে। আর মুখ্যমন্ত্রী? কে আবার, স্থানীয় বিজেপি নেতা-সাংসদ! বিজেপি নেতাদের বঙ্গভঙ্গের দাবির তুলোধোনায় এভাবেই সরগরম ফেসবুক-ট্যুইটার। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা অনুন্নয়নের ইস্যুকে ঢাল করে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য ঘোষণার দাবি তুলেছেন। ধুয়ো তুলেছেন আরেক বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তাঁর আবার দাবি, একই যুক্তিতে জঙ্গলমহল নিয়েও আলাদা রাজ্য চাই। বাংলা ভেঙে যত্রতত্র রাজ্য বানানোর এই দাবিই এখন হাসির খোরাক সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঝাঁপিয়ে পড়েছে ‘ট্রোল’-বাহিনী। মিমে উপচে পড়ছে নিউজফিড। এই আমোদ নিয়েই আপাতত অবসর যাপনে ব্যস্ত বাঙালি।
কেমন সেই সব আজগুবি দাবিদাওয়া? একজন লিখেছেন, ‘লোকে বেহালাকে এমনিতেই দ্বীপ বলে, তাই আমি আলাদা বেহালা রাজ্যের দাবি জানাচ্ছি।’ অন্যজন আবার জানিয়েছেন, চন্দননগরকে আলাদা রাজ্য দেখতে চান। তার রাজধানী করা হোক স্ট্র্যান্ড ঘাটকে। কেউ কেউ হাওড়াকে পৃথক রাজ্য দাবি করে ডোমজুড়কে রাজধানী করতে চেয়েছেন। এছাড়া উত্তরপাড়াকে রাজ্যের মর্যাদা কিংবা দমদমে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে ভরে উঠছে ফেসবুক। নিজের পাড়াকেও অনেকে রাজ্যের গোত্রে ফেলতে চেয়েছেন। আবার কলকাতাকে একটা আস্ত মহাদেশ বানানোর দাবিতেও সরব বহু মানুষ। আর এসব নিয়েই কার্যত ছুঁচো গেলার অবস্থা রাজ্য নেতৃত্বের। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে রথী-মহারথীদের নামিয়েও কল্কে পায়নি বিজেপি। ২০০ আসনের স্বপ্ন ফেরি করতে ভোটপূর্বে অহরহ রাজ্য সফরে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা দুই সংখ্যায় আটকে গিয়ে আর এমুখো হননি। রাজ্য নেতারাও ভোট পরবর্তী সময়ে দিশাহারা। সেই পর্বেই এবার তাঁরা তুলেছেন এক উদ্ভট দাবি—বঙ্গভঙ্গের। জবাবে খড়্গহস্ত বাঙালি বেছে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলের রাস্তা। সেই ক্ষোভ আঁচ করেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে বাংলা অখণ্ড রাখার বক্তব্য পেশ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ফেসবুকের ট্রোল নিয়ে প্রশ্নে তাই সাবধানী শুনিয়েছে বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের গলাও। জানিয়েছেন, ‘বিজেপি অখণ্ড বাংলার পক্ষেই। কিন্তু, উত্তরবঙ্গ বা জঙ্গলমহলে উন্নয়নের ছোঁয়া যায়নি।’ তাতেও হাসি-ঠাট্টা বন্ধ হওয়ার নাম করছে না।
বাঙালির সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনে স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গভঙ্গের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। সেই আবেগে খোঁচা পড়লে এমনিতেই গর্জে ওঠেন বঙ্গবাসী। এবারও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে নেট-দুনিয়ায়। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ার রঙ্গ শুনে তো বলেই বসলেন, ‘বাংলাভাগের কথা অত্যন্ত হাস্যকর। তাই মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীও জানাচ্ছেন, ‘এখনই রাজ্যকে তিন ভাগে ভেঙে দেওয়ার কোনও কারণ আছে বলে মনে হয় না। কারণ, বাঙালি আবেগ রয়েছে।’ অভিনেতা কৌশিক সেন বলেন, ‘খবরে থাকার জন্য ওদের (বিজেপির) স্রেফ একটা ইস্যু চাই। শহর তো বটেই, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও বুঝতে পারছেন এর মধ্যে গিমিক আছে। তাই ট্রোলও হচ্ছেন।’