রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পাওয়া গেল আম্পানে ভেঙে পড়া,কেটে ফেলা গাছের হিসেব

June 26, 2021 | 2 min read

মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) একটা ছোট্ট নির্দেশ। তাতেই হুলস্থূল বনদফতরে ।

কয়েক দিন আগে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, আম্পানে (Amphan) যে সব গাছ কাটা হয়েছিল সেগুলো কোথায় গেল? সেই গাছগুলোর (Trees) সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তিন দিনের মধ্যে তার রিপোর্ট তলব করেছিলেন মুখ্যসচিবের থেকে। অর্থ সচিবকেও দেখতে বলেছিলেন। নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে অবশেষে খোঁজ মিলেছে ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছগুলির। রাজ্য বনবিভাগ, কলকাতা পুরসভা-সহ বিভিন্ন দফতর থেকে আম্পানে উপড়ে যাওয়া গাছের বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনে গাছের গুঁড়িগুলিকে নদী ও সমুদ্র বাঁধ মেরামতের মতো কোনও সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে নবান্ন।

বনদফতরের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী, আম্পানে ঝড়ে কলকাতা এবং তার আশপাশে যে সব গাছ ভেঙে পড়েছিল অথবা মাটি থেকে উপড়ে গিয়েছিল, তার ডালপালা ছেঁটে কাঠের গুঁড়ি বানিয়ে সল্টলেকের বনবিতানে রাখা আছে। সেগুলি আপাতত প্রিন্সিপাল চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্টের হেফাজতে রয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন পার্কে গাছের গুঁড়িগুলিকে প্যাকেট-বন্দি করে রেখে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভা এলাকায় যে সব গাছ পড়েছিল তার একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই টেন্ডার ডেকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর কিছু গাছ টালা পার্ক এবং ইএম বাইপাস সংলগ্ন ধাপায় জমা করা রয়েছে। তবে এগুলি সবই জ্বালানি কাঠ। নবান্নের পরামর্শ মেনেই তার সদগতি করা হবে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।

বন দফতরের (Forest Dept) আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, আম্পানের পর তাঁদের প্রধান লক্ষ্য ছিল গাছগুলিকে সরিয়ে দ্রুত রাস্তা পরিষ্কার করা। তার উপর করোনা এবং লকডাউনের কারণে গাছের ডালপালা ছাঁটা এবং কাঠের গুঁড়ি সরানোর জন্য পর্যাপ্ত লোক ছিল না। ফলে উপড়ে যাওয়া গাছগুলি কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় পড়েছিল। সেই সময় বহু গাছের গুঁড়ি এবং ডালপালা বেহাত হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে আধিকারিকদের ধারণা। বনদফতরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘সাধারণত ঝড়ে রাস্তায় গাছ পড়ে থাকলে আশপাশের লোকেরা ডালপালা কেটে নিয়ে চলে যায়। দামি গাছ হলে অনেকে সেটা তুলে নিয়ে চলে যায়। যেহেতু ওই সময় কোনও নজরদারি ছিল না, সেই সুযোগে কিছু গাছ খোয়া গেলেও যেতে পারে। তবে যে সব গাছ ভালো দামে বিক্রি হতে পারে, সেগুলির গুঁড়ি বনবিতানে প্যাকেটবন্দি করে করে রেখে দেওয়া হয়েছে। আম্পানে উপড়ে যাওয়া গাছের গুড়িগুলিকে মূলত নদী বাঁধ পাইলিংয়ের কাজে লাগাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আম্পানে কলকাতা এবং তার আশপাশের এলাকায় যে সব গাছ উপড়ে পড়েছিল তার গুঁড়ি ততটা মজবুত নয়।’

বন দফতরে র হিসেব, আম্পানে তাদের এলাকায় হাজার দশেক গাছ পড়েছিল। কলকাতা পুরসভা এলাকায় প্রায় ১৪,৭৮০টির মতো গাছ উপড়ে গিয়েছিল। কলকাতার ১৫টি পার্ক এবং ইএম বাইপাসের আশপাশের এলাকায় প্রায় ১৫৬০টি গাছ পড়েছিল। এর মধ্য ছিল অশ্বত্থ, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি, শিরিষ, রুদ্রপলাশ, কদম, নিম, রেন ট্রি, দেবদারু। মেহগনি এবং নিম ছাড়া আর কোনও গাছ ততটা মজবুত নয়। ফলে সেগুলি দিয়ে পাইলিং করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বন দফতরে র আধিকারিকরা।

কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ সদস্য তথা বর্তমান পুর প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘যে গাছগুলি বিক্রি করার মতো সেগুলি আমরা বনদপ্তরকে দিয়ে টেন্ডার ডাকিয়ে বিক্রি করেছি। আরও কিছু গাছ শহরের বিভিন্ন পার্কে পড়ে রয়েছে। যদি সেগুলি সরকারি কাজে লাগে আমরা দিয়ে দেবো। তবে এগুলি নদী বাঁধ মেরামতির কাজে লাগবে কি না, সেটা বলতে পারব না। ইঞ্জিনিয়াররা ভালো বলতে পারবে। তবে আমরা এর আগে পাইলিংয়ের জন্য কিছু গাছ দিয়েছি।’

আম্পানের পর শহরে কয়েকশো গাছ প্রতিস্থাপন করেছিলেন অর্জন বসু রায়। তিনি বলেন, ‘পাইলিংয়ের জন্য কাঠের একটু লম্বা গুঁড়ি লাগে। অন্তত ১২-১৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৬-১০ ইঞ্চি বেড় হতে হবে। ঝড়ের পর দ্রুত ডালপালা সরানোটাই উদ্দেশ্য ছিল। ফলে পাইলিংয়ের মতো করে গাছগুলো কাটা হয়নি। তবে পাইলিংয়ের গোড়ায় গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করা যেতেই পারে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #uprooted trees

আরো দেখুন