বাংলা শস্যবিমার আরও সম্প্রসারণ, ২১ ধরনের সব্জি, ফুল, ফলকে আনা হল আওতায়
বাংলা শস্যবিমা(Crop Insurance) প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার (West Bengal Govt)। বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ধান, গম, পাট, ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ সহ মোট ১১ ধরনের কৃষিপণ্য। আর সব্জির মধ্যে একমাত্র আলু। এর পরিধি আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কৃষি বিমা সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ২১ ধরনের সব্জি, ফুল, ফল বিমার আওতায় আনা যেতে পারে। এই সংখ্যা আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি বিমা সংস্থা ও উদ্যানপালন দপ্তরের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি বিমা সংস্থার রিজিওন্যাল ম্যানেজার শান্তু দাস জানিয়েছেন, সব্জি, ফুল, ফল প্রভৃতির ক্ষেত্রে আবহাওয়াভিত্তিক বিমা হয়। কোনও এলাকার আবহাওয়াজনিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণ দেয়। কৃষিদপ্তরের নিজস্ব কেন্দ্র থেকে বৃষ্টি, তাপমাত্রা প্রভৃতির এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যানও নেয় বিমা সংস্থা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টিজনিত কারণে ফুল, সব্জি প্রভৃতির বেশি ক্ষতি হয়। বৃষ্টির ব্যাপারে সব্জি খুবই স্পর্শকাতর। একটু বেশি বৃষ্টি হলে মাঠেই নষ্ট হয় যায় সব্জি। ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা। সরকারি কৃষি বিমার আওতায় এলে সব্জি চাষিদের অনেকটাই আর্থিক সাশ্রয় হবে। তবে এই বিমার প্রিমিয়ামের আর্থিক দায়ভার কৃষককে বহন করতে হবে কি না, সেটা সরকার ঠিক করবে।
বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পে অধিকাংশ কৃষিপণ্যের উপর বিমার প্রিমিয়ামের টাকা কৃষকদের দিতে হয় না। পুরো খরচই বহন করে রাজ্য সরকার। শুধু আলু ও আখের প্রিমিয়ামের মাত্র ৫ শতাংশ কৃষককে দিতে হয়। কৃষি বিমার আর্থিক দায় রাজ্য নেওয়ার পর এতে কৃষকের অংশগ্রহণ বাড়ছে। গত বছর খরিফ মরশুমে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম থাকা সব কৃষককে সরাসরি বিমা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সংখ্যাটা প্রায় ৬৫ লক্ষ। রবি-বোরো মরশুমেও প্রায় ৫৫ লক্ষ কৃষক বিমা করান। কৃষিপণ্যের ক্ষতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখন ইসরোর উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা সম্ভব। গত খরিফ মরশুমে রাজ্যে বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। তা সত্ত্বেও কৃষিপণ্যের ক্ষতি বাবদ ৩০৬ কোটি টাকা দিয়েছে বিমা সংস্থা।
এই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে সরাসরি। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় কৃষিপণ্যের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণের কাজ এখনও চলছে বলে বিমা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। বোরো ধান, আখ, সর্ষে প্রভৃতির ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। খুব শীঘ্রই জেলা পর্যায়ে কৃষিদপ্তরকে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে। ঘূর্ণিঝড়ে তিল, বাদাম প্রভৃতির ক্ষতি হয়েছে। ওইগুলির ক্ষতি নির্ধারণের কাজও চলছে।