দীঘা ও মন্দারমণিতে বাড়ছে পর্যটকের ভিড়
বাংলার রূপ বর্ষাতেই সবচেয়ে সুন্দর। রবীন্দ্রনাথ থেকে হুমায়ূন আহমেদ, সকলের লেখনীতেই বারবার ফুটে উঠেছে বাদলা দিনের বন্দনা। এই সময় যেমন চারিদিক ভরে ওঠে সবুজে, তেমনই সমুদ্রও হয়ে ওঠে বেপরোয়া। সেই উত্তাল সমুদ্রের ডাক ফেরাতে পারছেন না করোনা পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি বাঙালিরা। সংক্রমণ কিছুটা কমতেই অধিকাংশেরই ডেস্টিনেশন দীঘা। তার জেরে দীঘা ও মন্দারমণির প্রায় সমস্ত হোটেল খুলে গেল। ২৬জুন পূর্ণিমার ভরা কোটালে দীঘা, শঙ্করপর, তাজপুর ও মন্দারমণিতে সি-বিচ লাগোয়া অনেক হোটেলে ঘরও পাওয়া যায়নি। তাতেই হোটেল মালিকদের মনে আশার আলো জেগেছে। বাস থেকে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করেছে সৈকত শহরে। সাইক্লোনের ধাক্কা সামলে প্রায় স্বাভাবিক হওয়ার পথে বাঙালির বেড়ানোর অন্যতম গন্তব্যস্থল দীঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর ও মন্দারমণি।
সোমবার মন্দারমণির দাদনপত্রবাড় ঘাটে পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে ঘুরছিলেন দুই ফটোগ্রাফার কমল বিশ্বাস ও শিবশঙ্কর দোলই। তাঁরা বলেন, মন্দারমণিতে মোট ৯৪জন ফটোগ্রাফার আছেন। গত সপ্তাহ থেকেই আমরা ১০জন কাজ শুরু করেছি। প্রতিদিন ভালো সংখ্যায় পর্যটক আসছেন। দৈনিক ২৫-৩০জনের ছবি তুলে প্রিন্ট করে দিচ্ছি। আমরা চাই, দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুক দীঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর ও মন্দারমণি। তাতে এখানকার ছোটবড় দোকানদার থেকে হোটেল মালিক এবং আমাদের মতো প্রত্যেকের রুজিরুটির সংস্থান হবে।
এদিন মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী প্রহ্লাদ সিংহ, ঘাটালের বাণীপীঠ থেকে প্রবীর সামন্ত, অনন্যা সামন্ত মন্দারমণি বেড়াতে এসেছেন। মন্দারমণির বিভিন্নঘাটে এরকম বেশ কয়েকজন পর্যটক সৈকতে বসে সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। আত্মশাসন ও তারপর সাইক্লোনের জেরে শুনশান অবস্থা কাটিয়ে আবারও দীঘা, মন্দারমণি পর্যটকদের আনাগোনায় কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠছে। এদিন ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তাজপুর ও মন্দারমণির অবস্থা পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। মন্দারমণিতে পর্যটকদের সঙ্গে ছবিও তোলেন মন্ত্রী।
গত সপ্তাহ থেকেই দীঘার বিভিন্ন ঘাটে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। ২৬জুন পূর্ণিমার কোটালে উত্তাল সমুদ্র দেখার জন্য প্রচুর পর্যটক দীঘায় আসেন। সি-বিচ বরাবর হোটেলে সমস্ত রুম বুক হয়ে গিয়েছিল। মহামারী পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি মানুষজন বাড়ির বাইরে বেরনোর জন্য অস্থির হয়ে উঠছেন। ১জুলাই থেকে বাস পরিষেবা চালুর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই বাস ও ট্রেন চালু হলেই দীঘা-মন্দারমণি পর্যটন কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম হবে বলে হোটেল মালিকদের আশা। দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, এই মুহূর্তে প্রায় সব হোটেল খুলে গিয়েছে। পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন। যাত্রী পরিষেবা স্বাভাবিক হলেই পর্যটকদের ঢল নামবে দীঘায়। মন্দারমণি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবদুলাল মহাপাত্র বলেন, একশো শতাংশ হোটেল চালু হয়েছে। পর্যটকরা আসছেন।
সাইক্লোনের তাণ্ডবের পর সোমবারই মন্দারমণিতে প্রথম ঝিনুকের দোকান খুলে বসেছিলেন জিতেন্দ্র বেরা। তিনি বলেন, আত্মশাসন ও তারপর ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু, ঘরে বসে থাকলে চলবে না। তাই পর্যটক আসা শুরু হতেই আবারও দোকানপাট খুলে বসেছি।
মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের কারও হাতে নেই। কিন্তু, সেসব ধাক্কা কাটিয়ে সৈকত শহর আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। সব হোটেল খুলে গিয়েছে। এখন থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। আমরা নিশ্চিত, আত্মশাসন উঠে গেলে এখানকার হোটেলে ঘর পাওয়া যাবে না।