বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চান মমতা
উত্তরবঙ্গে (North Bengal) একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বাজেটেই সেই ঘোষণা করা হতে পারে। একইসঙ্গে এবার উত্তরবঙ্গের চা, পর্যটন ও অন্যানা কৃষিনির্ভন শিল্পের কথা মাথায় রেখে কলকাতার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও শিল্প-বাণিজ্য সম্মেলন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর (North Bengal Development Department) মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই রেখেছেন। তাই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি নিজেই দপ্তরের অফিসারদের কাছে খোঁজখবর নিচ্ছেন। উত্তরবঙ্গের জন্যে এবার বাজেটে যে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করবেন বলে জানা গিয়েছে, সেখানে যেমন পর্যটন, চা এবং কৃষি নির্ভর শিল্পের উন্নয়নের কথা থাকবে তেমনই স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা পরিকাঠামো উন্নয়নেও নজর দেওয়ার বিস্তারিত পরিকল্পনার রূপরেখা থাকবে।
সূত্রের খবর, বাজেট (Budget) তৈরির আগে তাই উত্তরবঙ্গ নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য প্যাকেজের পরিকল্পনা নেওয়া হযেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের অনেকগুলি পরিকল্পনা রয়েছে। তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
উত্তরবঙ্গে লোকসভার ৮টি আসনের একটিও তৃণমূলের দখলে নেই। ১০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সাতটি বিজেপি দখল করেছিল। এখানকার ৫৪ টি বিধানসভা আসনের ৩৮ টি আসনে বিজেপি এগিয়েছিল। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে পরিস্থিতি কিছুটা নিজেদের অনুকূলে আনতে পেরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনের মধো ২৩টি তৃণমূল দখল করেছে। এরইমধ্যে সেখানে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য গঠনের দাবিতে সরব হতে দেখা গিয়েছে বিজেপি সাংসদকে। কোনওভাবেই যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথাচাড়া দিতে না পারে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দলীয় নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকেও সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণ এই আন্দোলন তৈরি হলে এলাকার উন্নয়নে তার প্রভাব পড়বে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনওভাবেই যাতে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত হিসেবে বিরোধীরা তুলে ধরতে না পারে, তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এবার উত্তরবঙ্গের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, এবার উত্তরবঙ্গের শিল্পগুলিকে নিয়ে পৃথক শিল্প- বাণিজ্য সম্মেলন করার। উত্তরবঙ্গের চা, পর্যটন ও কৃষি নির্ভর প্রচুর শিল্প আছে। তাই সেখানে দেশি-বিদেশি শিল্পপতিরা এলে তাদের এখানকার শিল্প সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা হবে।
গত দু’বছর করোনার কারণে পর্যটন শিল্প ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। এই ধারা কাটিয়ে যাতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসেন, তার জন্য প্রচারেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এই শিল্পে বিদেশি শিল্পপতিদের লগ্নিও মমতা চাইছেন। তাহলে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্প আরও প্রসার লাভ করবে ও গত দু’বছরের ধারা অনেকখানি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে শিল্প দপ্তরের কর্তারা মনে করছেন। পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও রাজ্য সরকার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। এই নিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একপ্রস্থ আলোচনাও হয়েছে।
এছাড়াও হলদিবাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর সবজি চাষ হয়। ওই সবজি ভিনরাজ্যে রপ্তানির আরও সুযোগ রাজ্য সরকার করতে চাইছে। ভিনরাজ্যে আরও সবজি পাঠানো গেলে স্থানীয় চাষিরা উপকৃত হবেন। একইসঙ্গে ওই চাষের ওপর নির্ভর করে কৃষি নির্ভর শিল্প স্থাপনের দিকেও রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিতে চাইছে।