১২-১৮ বছর বয়সীদের জন্য টিকা ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন জাইডাস ক্যাডিলার
কিশোর কিশোরীদের টিকা দিতে ডিসিজিআইয়ের (ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া) কাছে আবেদন করল ভারতীয় সংস্থা জাইডাস ক্যাডিলা। ১২-১৮ বছর বয়সের এক হাজার কিশোর-কিশোরীর উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৬৬.৬ % কার্যকর করোনার এই ভ্যাকসিনের ‘ইমার্জেন্সি ইউজ’-এর ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে। এবার ট্রায়ালের নথি নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখে ডিসিজিআই এই অনুমোদন দেবে। আর সেই ছাড়পত্র পেলে এটিই হবে ভারতের প্রথম ১২ ঊর্ধ্বদের করোনার ভ্যাকসিন। ‘জাইকোভ-ডি’ নামে তিন ডোজের এই টিকা ১৮ ঊর্ধ্বদেরও দেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যথাক্রমে ২৮ এবং ৫৬ দিনের মাথায় পরের দুটি নিতে হবে।
এই ডিএনএ ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা, মানব শরীরে নিরাপদ কি না তা পরীক্ষা করতে গোটা দেশের ২৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর ট্রায়াল হয়েছে। তারই ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ‘সার্স কোভ-টু’ ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেল্টা’র উপরও কাজ করছে এই ভ্যাকসিন। ফলে একবার কেন্দ্রের ছাড়পত্র পেলে বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি ডোজ তৈরির কাজ শুরু করে দেবে আমেদাবাদের এই টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানি। উল্লেখ্য, ১২ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের ক্যাডিলার এই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ‘জাইকোভ-ডি’র ৫ কোটি ডোজ কিনবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
এদিকে, কলকাতা কাণ্ডের জেরে ভ্যাকসিন বিতরণের বিষয়ে সজাগ হয়ে গিয়েছে কেন্দ্র। সেই মতোই এবার প্রাইভেট হাসপাতালের ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। গত ২১ জুন থেকে শুরু হওয়া নীতি মোতাবেক সরকারি টিকাকেন্দ্রে সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার মোট উৎপাদনের ৭৫% কিনে নিচ্ছে। বাকি ২৫% প্রাইভেট হাসপাতালগুলি সরাসরি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে কিনছে। তবে কলকাতার ফেক ভ্যাকসিন কাণ্ডের পাশাপাশি তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের আবেদনে গুরুত্ব দিয়েই প্রাইভেটের জন্য সামান্য কড়া হল কেন্দ্র।
ঠিক হয়েছে, এবার থেকে সরাসরি কোম্পানি নয়, করোনা টিকাকরণের সরকারি পোর্টাল ‘কো-উইনে’র মাধ্যমেই ডোজ পাবে প্রাইভেট হাসপাতাল। যাতে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল কত ভ্যাকসিন কিনছে, কতটা ব্যবহার হচ্ছে, কেউ জমিয়ে রাখছে কি না ইত্যাদি পুঙ্খানুপুঙ্খ নজরে রাখতে পারে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। গোটা দেশে ৩৯ হাজার ৯৪০ টি কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাইভেট কেন্দ্রের সংখ্যা ১,৯২৭। বেসরকারি টিকাকেন্দ্র যেহেতু কম, তাই সেখানে মেপে ডোজ পাঠালেই চলবে বলে মনে করছে কেন্দ্র। তাই প্রাইভেট হাসপাতালকে ভ্যাকসিন সরবরাহের নিয়মে সামান্য বদল আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজ্য হোক বা কেন্দ্র, সরকারি টিকাকেন্দ্রে ১৮ ঊর্ধ্বদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে টিকা মিললেও প্রাইভেটে পয়সা দিয়েই ভ্যাকসিন মিলছে। তবে টিকার দাম বাদ দিয়ে তা লাগানোর খরচ বাবদ ডোজ পিছু সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থায় এখনও পর্যন্ত ৭২ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, ৯৫ লক্ষ প্রত্যক্ষ কোভিড যোদ্ধার পাশাপাশি ৪৫ ঊর্ধ্ব ৩ কোটি ৯৭ লক্ষ এবং ১৮-৪৪ বছর বয়সের ২০ লক্ষ নাগরিক দু’টি করে ডোজ পেয়ে গিয়েছেন বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। রাজ্যগুলির উদ্যোগেই সংক্রমণের রেখাচিত্রও ক্রমশ নিম্নমুখী হয়েছে। গত চারদিন টানা দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা রয়েছে ৫০ হাজারের নীচে।