বর্ধিত দামে মদ বিকোচ্ছে কালোবাজারে
বিপিনবাবুর কারণসুধা শুধু জ্বালা আর ক্ষুধাই মেটায় না, তার জাদু দিয়ে সে মরা মানুষও বাঁচিয়ে তুলতে পারে— এমনটাই বলা হয়েছিল সত্তরের দশকের এক জনপ্রিয় বাংলা ছবির গানে। তবে তার ৪৫ বছর পর, এখন এই লকডাউনেও কারণবারি কম জাদু দেখাচ্ছে না!
বিভিন্ন কাজকর্মের ফাঁকে মদের কালোবাজারিও করেন, এমন পরিচিত এক যুবক তিন দিন আগে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন, মদ লাগবে কি না। একটি হুইস্কির ব্র্যান্ডের নাম বললেন তিনি। দাম ২০০০ টাকা! ৭৫০ মিলিলিটারের বোতল। এমনিতে যার দাম ৫২০ টাকা। অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, রামের ৩৫০ টাকার বোতল লকডাউন শুরু হওয়ার দিন দশেক পরে ১৬০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। যে ব্র্যান্ডের হুইস্কির কথা ওই যুবক বললেন, সেই পানীয় কলকাতার অন্যত্র ৩০০০, এমনকী ৪০০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
ওই যুবকের গলা সামান্য চড়ল, ‘এটা পুরোনো স্টকের না, নতুন স্টকের জিনিস। নতুন লটে ৫২০ টাকার বোতলের দাম বেড়ে ৬৭০ টাকা হয়েছে। আমার কাছে সেই জিনিস। চাইলে দেখে নিতে পারেন।’ এখানেই ধাক্কা খেতে হল।
কারণ, কালোবাজারের কারবারিদের মদ কেনার বরাবরের একমাত্র উৎস সাধারণত হল, মদের দোকান বা খুচরো বিক্রেতা অর্থাৎ রিটেলাররা। ‘সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে’ ব্ল্যাকাররা সেই মদ চড়া দামে বিক্রি করে। মদের দোকান বন্ধ হওয়ার পর, বেশি রাতে কিংবা বিভিন্ন ‘ড্রাই ডে’-তে। কিন্তু লকডাউনে মদের দোকানই যখন বন্ধ, তখন তারা মদ পাচ্ছে কী করে? বিশেষ করে, বর্ধিত দামের নতুন মদ! যে মদ খোলা বাজারেই পৌঁছতে পারেনি লকডাউনের কারণে!
নানাবিধ ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মদের দাম যে ৩০ শতাংশ বাড়ছে, সেই মর্মে রাজ্য অর্থ দপ্তর গত ৭ এপ্রিল একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। রাজ্যে লকডাউন শুরু হয়েছে ২৩ মার্চ বিকেলে। ওই দিন বিকেলে বন্ধ হওয়ার পর রাজ্যে মদের দোকান আর খোলেনি। যে কারণে ৩০ শতাংশ বর্ধিত দামের মদ বা নতুন লটের মদ কালোবাজারে ঢোকার কথা নয়।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পানীয় নিগম বা ‘বেভকো’ গঠনের মাধ্যমে মদের পাইকারি কারবারের রাশ গত কয়েক বছর যাবৎ রাজ্য সরকারের হাতে। ১৫ এপ্রিল নিগম খোলে এবং অনলাইনে খুচরো বিক্রেতা বা রিটেলারদের কাছ থেকে ইনডেন্ট অর্থাৎ অর্ডার নিতে শুরু করে। এই পর্যায়ে বেভকো খোলা ছিল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
বিষয়টি জেনেছেন লালবাজারের কর্তারাও। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা শনিবার বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি টাকা রোজগারের জন্য কেবল মদের দোকানের মালিকদের একাংশই এই কালোবাজারিতে উৎসাহ দিলেন নাকি আরও কেউ এতে জড়িত, সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’