লকডাউনে ধুলো জমছে চড়িদার মুখোশ গ্রামে
লকডাউনে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেটাই যে চড়িদার মুখোশ গ্রামে ভরা মরসুম। আর এই মরসুমে লকডাউন প্রবল বিপর্যয় ডেকে এনেছে পুরুলিয়ার মুখোশ গ্রামে। বিনা রোজগারে কার্যত দিশাহারা এখন গোটা গ্রাম।
সারা বছর ঝালদা-বাঘমুন্ডির রাস্তার দু’পাশে দোকানগুলিতে সাজানো থাকে ছৌ নাচে ব্যবহারযোগ্য নানা রঙের মুখোশ। কোনওটা পৌরাণিক কাহিনির উপর কোনওটা ঘর সাজানোর উপযোগী মুখোশ। সঙ্গে থাকে মৃৎশিল্পও।
সারা বছর ধরেই পর্যটক মুখর থাকে অযোধ্যা পাহাড়। যাঁরাই পাহাড়ে আসেন, সকলে অন্তত একবার ঢুঁ মারেন চড়িদায়। বিকিকিনি লেগেই থাকে গ্রামে। শীতের মরসুম থেকে বৈশাখি পূর্ণিমা পর্যন্ত পর্যটকপূর্ণ থাকে পাহাড়। এ সময় বিক্রিও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় মুখোশ গ্রামে। সব কিছু হিসেব মতোই চলছিল। হঠাৎ করোনা এসে সব কিছু ওলোটপালোট করে দিয়েছে। চড়িদা গ্রামের সব বাড়িতে জমে রয়েছে প্রচুর মুখোশ। বিক্রি বন্ধ।
মুখোশ তৈরির মহিলা শিল্পী অমৃতা সূত্রধর ও আরতি সূত্রধর বলেন, ‘মুখোশ তৈরির উপকরণ শিল্পী পরিবারগুলো ঋণের টাকায় ক্রয় করে থাকেন। পর্যায়ক্রমে সেই ঋণ তাঁরা শোধ করেন। এ বছর মুখোশ বিক্রি মরসুমের মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন। ঋণের টাকা শোধও করা যাচ্ছে না। পেটেও টান পড়েছে।’
মুখোশ শিল্পী শুধাংশু সূত্রধর বলেন, ‘ছৌ নাচের দলগুলোও এখান থেকে মুখোশ কেনেন। তাঁরা অনেকে বাকিতে মুখোশ নেন। চৈত্র গাজনে ছৌ নাচের পালা করার পর ধার শোধ করে দিয়ে যান। এ বছর চৈত্র গাজন বন্ধ হয়ে গিয়েছে জেলায়। সেটাও বড় ভাবনা।’
শিল্পী নিরঞ্জন সূত্রধর, ঝন্টু সূত্রধর বলেন, ‘সরকার রেশনের মাধ্যমে চাল, আটা, চিনি দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে তো সার্বিক খরচ মেটে না।’
বাঘমুন্ডি বিধানসভা এলাকার বিধায়ক নেপাল মাহাতো। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘চড়িদা পুরুলিয়ার মুখোশ গ্রাম শুধু নয়, এই গ্রাম ছৌ নাচের প্রাণকেন্দ্রও। এই গ্রামেই ছৌ নাচের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী পদ্মশ্রী গম্ভীর সিং মুড়ার বাড়ি। মুখোশ না হলে ছৌ হয় না। ছৌ হল বাংলার গর্ব। অযোধ্যা পাহাড় পর্যটনেরও অন্যতম আকর্ষণ চড়িদা। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে ওঁরা সমস্যায় পড়েছেন। সেটা তো অস্বীকার করা যাবে না। ওঁদের সহায়তা করা উচিত সরকারের।’