বারলাকে মন্ত্রী করে বঙ্গভঙ্গের ষড়যন্ত্র বিজেপির? আন্দোলনে নামবে তৃণমূল
আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাকে (John Barla) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়াকে বাংলা ভাগের ছক হিসেবেই তুলে দেখতে চায় তৃণমূল (TMC)। বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন জন। সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে তাঁকে।
বার্লাকে মন্ত্রী করার ক্ষেত্রে দল যে কড়া অবস্থান নিতে চলেছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক দল। তারা এমন একজনকে উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রী করলেন যিনি বাংলা ভাগ চান। পাহাড় নিয়ে আগেও এই ধরনের মদত দেওয়া হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে আলিপুরদুয়ার সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গ সবসময় উত্তরবঙ্গকে অবহেলা করেছে৷ এখানকার রাজস্ব দক্ষিণবঙ্গে চলে গিয়েছে৷ উত্তরবঙ্গের মানুষ এর কোনও সুফলই পান না৷ সেই কারণেই আমি উত্তরবঙ্গের পৃথক রাজ্যের মর্যাদা চাইছি৷ আমার বিশ্বাস, তা হলেই এখানকার মানুষ খুশি হবে এবং প্রকৃত উন্নয়ন হবে৷ সংসদের অধিবেশন শুরু হলেই আমি এই দাবি জানাবো৷’’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদে নামে তৃণমূল। জনের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
সেই সাংসদকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার প্রতিবাদে এ বার সরব হতে চাইছে বাংলার শাসক দল। তাঁকে মন্ত্রী করা বাংলা ভাগের ধারণা উস্কে দেওয়ার ‘পুরস্কার’— এই অভিযোগ তুলে জোরালো প্রচার করতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলছেন, ‘‘আমরা জন বার্লার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে প্রশ্রয় বা গুরুত্ব কোনওটাই দিতে চাই না। কিন্তু, বিজেপি যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলা ভাগের উস্কানি দিতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে আমরা সরব হব। বিজেপি বাংলায় পরাজিত হওয়ার পর যে বিভাজনের রাজনীতি উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।’’
আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গকে বাংলা থেকে আলাদা করার জন্য বিজেপি নতুন উকিল ঠিক করেছে। তিনি জন বার্লা। বাংলাকে ভাগ করার উস্কানি দেওয়ার জন্য তাঁকে পুরস্কার দিয়েছে বিজেপি। আমরা ওর মুখোশ খুলে দেব। বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। আর ওঁকে যে মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে পর্যটন ও চা শিল্প নির্ভর উত্তরবঙ্গের কোনও উন্নয়ন হবে না। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদকে যদি পর্যটন বা বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হত, তা হলে উত্তরবঙ্গের জন্য কোনও সুযোগ সুবিধা আদায়ের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মদত দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে তাঁকে। একথাও আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষের সামনে তুলে ধরব।’’
শুধু জনকে মন্ত্রী করা নিয়েই নয়, তৃণমূল যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই রদবদল নিয়েও ধারাবাহিক আক্রমণ শানাবে, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, ‘পূর্ণমন্ত্রী নন, বাংলা থেকে ৪ রাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁদের মন্ত্রিত্বের শুভেচ্ছা। কিন্তু দামি মানিব্যাগে রাখলেই অচল পয়সা কি সচল হয়? বাবুল, দেবশ্রী রাজ্যকে কী দিয়েছেন, হিসেবটা চান। বুঝবেন নতুনদের এই সান্ত্বনা পুরস্কারের দাম কতটুকু। ভোটের যে অঙ্কে এই খেলা, সে অঙ্ক মিলবে না।’’