রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

চটশিল্পে এক লক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে উদ্যোগী রাজ্য

July 13, 2021 | 2 min read

বেকার সমস্যায় জর্জরিত এই দেশে এ যেন উলটপুরাণ! চাকরি আছে। কিন্তু তা করার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছে না! খুব সামান্য বেতনের চাকরি, এমনটাও নয়। এমন চাকরিতে যোগ দিলে মাসে পাঁচ অঙ্কের রোজগার নিশ্চিত। তাও মিলছে না আগ্রহী উপযুক্ত কর্মপ্রার্থী। এমন চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গেই। এ রাজ্যের চটশিল্পে (Jute Mill) কমপক্ষে এক লক্ষ শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত লোক খুঁজে পাচ্ছে না তারা। অবশেষে শূন্যপদ পূরণের জন্য রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। রাজ্যে নিত্যনতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সদা তৎপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এমন আবেদনকে একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা হিসেবেই দেখছেন। তাঁর নির্দেশে এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয় হয়েছে শ্রমদপ্তর। দপ্তরের মন্ত্রী বেচারাম মান্নার কথায়, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে মাস চারেকের মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। শুধু তাই নয়, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে চটকলগুলির উৎপাদন ১০০ শতাংশে পৌঁছবে। ফলে চটের ব্যাগ সরবরাহে ঘাটতির ছবিটাও বদলাবে।

কেন এই উলটপূরাণের ছবি চটশিল্পে? বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বিষয়ে প্রশাসনই বা কীভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে? চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ এবং শ্রমদপ্তর সূত্রের খবর, বর্তমানে রাজ্যে ৬৯টি চটকলে গড়ে ৬০ শতাংশ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতি বা কাঁচা পাটের অভাবজনিত সমস্যা তো আছেই। তবে উৎপাদন কম হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ লক্ষাধিক শ্রমিকের পদ শূন্য পড়ে থাকা। চটকলগুলিতে প্রশিক্ষিত দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা এখন হাতে গোনা। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অতীতে দেখা যেত, কোনও দক্ষ শ্রমিক অবসর নেওয়ার পর সেই কাজে তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম যোগ দিচ্ছে। অতীতের সেই প্রথা এখন আর নেই বললেই চলে। এখনকার প্রজন্ম এই কাজে আসতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। দক্ষতার অভাবের কারণে সরাসরি বাজার থেকে এই বিভাগগুলির জন্য শ্রমিক আনাও সম্ভব নয়। ফলে কিছুটা বাধ্য হয়েই চটকলগুলি উৎপাদন কমিয়ে এনেছে।

এই সমস্যা নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগেই চটশিল্প কর্তৃপক্ষের তরফে নবান্নে দরবার করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে শ্রমমন্ত্রীর উদ্যোগে জুট কমিশনার ও দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা আইজেএমএর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক হয়, বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মঠ, স্বাস্থ্যবান বেকার যুবকদের সন্ধান করে আনবে শ্রমদপ্তর। এ ব্যাপারে প্রচারের জন্য সরকার সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দেবে। তারপর নির্বাচিত যুবকদের কয়েকটি নির্দিষ্ট চটকলে তিন মাসের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সেই প্রশিক্ষণ পর্বে থিয়োরিটিক্যাল ক্লাস করাবেন সরকার ও শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ওই চটকলেই হাতেকলমে কাজ শিখবেন নির্বাচিত কর্মপ্রার্থীরা। প্রশিক্ষণ পর্বে মালিকপক্ষের তরফে দৈনিক ২৮০ টাকা স্টাইপেন্ডও দেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকার তথা এমপ্লয়মেন্ট ডিরেক্টরেটের তরফে দৈনিক ৮০ টাকা করে খাওয়ার খরচ মিলবে। প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেটের সঙ্গেই মিলবে পিএফ, গ্র্যাচুইটির সুবিধা সহ পাকা চাকরির নিয়োগপত্র। এভাবেই বেসরকারি ক্ষেত্রে অন্তত এক লক্ষ বেকারের জন্য চাকরির দরজা খুলে যাবে বলে আশাবাদী শ্রমদপ্তর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #jute mills

আরো দেখুন