মতপার্থক্য দমনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ ঠিক নয়: বিচারপতি চন্দ্রচূড়
গণতন্ত্রে ‘সেফটি ভাল্ভের’ মতো কাজ করে ভিন্নমত। প্রশ্ন করা কিংবা বিরোধিতার পথ বন্ধ করে দিলে সার্বিক অগ্রগতিই বাধাপ্রাপ্ত হয়- গত বছর এক আলোচনাসভায় এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ( Supreme Court of India) বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (Dhananjaya Y. Chandrachud)। সোমবার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বললেন, ‘মতপার্থক্য দমনে কথায়-কথায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ ঠিক নয়।’
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গত বছর সন্ত্রাস-বিরোধী আইনেই গ্রেফতার করা হয়েছিল অশীতিপর সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামীকে। তাঁর জামিনের আর্জি বম্বে হাইকোর্টে ওঠার আগেই সম্প্রতি হাসপাতালে মৃত্যু হয়ে তাঁর। স্ট্যানের মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রের হাতে খুন’ বলে উত্তাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। আলোড়ন পড়েছে আমেরিকা-সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে।
এই পরিস্থিতি আইনি চুক্তি সংক্রান্ত ইন্দো-আমেরিকা জয়েন্ট সামার কনফারেন্সে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। ইউএপিএ-র মতো সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের ধারায় সম্প্রতি সাংবাদিক থেকে শুরু করে অনেকের বিরুদ্ধেই দেশদ্রোহের মামলা করেছে কেন্দ্র। সিএএ প্রতিবাদে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ইউএপিএ মামলায় দেড় বছর জেল খেটে সম্প্রতি বাইরে এসেছেন অসমের নেতা অখিল গগৈ। সন্ত্রাসে অভিযুক্ত এক কাশ্মীরি যুবক ১১ বছরের লড়াই শেষে সবে বেকসুর খালাস হয়েছেন।
বিচারপতি চন্দ্রচূড় তাই কেন্দ্রকেই পরোক্ষে নিশানা করলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তা-ও কিনা এমন এক দেশের সঙ্গে যৌথ সম্মেলনে, যে আমেরিকা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বহু বার একহাত নিয়েছে ভারতকে। বিচারপতির মতে, বাকস্বাধীনতা রক্ষা রাষ্ট্রেরই কর্তব্য কাজ হওয়া উচিত। আতঙ্ক ছড়িয়ে বা দমনপীড়নের মাধ্যমে সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে রাষ্ট্রের উচিত তার চেষ্টার বিরোধিতা করা। সঙ্গে আদালত তো দেওয়াল হয়ে দাঁড়াবেই।
সোমবার সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘নাগরিক অসন্তোষ দমনে ফৌজদারি আইনের ব্যবহার ঠিক নয়। ‘অর্ণব গোস্বামী বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে নাগরিকের স্বাধীনতা বা অধিকার রক্ষায় আদালতকেই প্রাথমিক ঢাল হয়ে কাজ করতে হবে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ভারতের বরাবরের সম্পদ।
বৈচিত্রময় সংস্কৃতি, নানাবিধ সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে ভারত। তাই ভারতীয় সংবিধান চিরকাল মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ দায়বদ্ধ। এই জায়গাটা কোনও ভাবেই নষ্ট করা যাবে না। প্রাপ্য স্বাধীনতা থেকে এক দিনের জন্যও নাগরিককে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।’ তবে ভিন্নমত প্রকাশের কিছু যুক্তিগ্রাহ্য পথ থাকা প্রযোজন বলেও মনে করেন তিনি।