স্বামীর খুনে অভিযুক্ত নিশীথ এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন জারিনা বিবি
স্বামীর খুনের ঘটনায় (Murder Case) অভিযুক্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী (Cabinet Minister)। তা জেনে এখন চিন্তায় পড়েছেন কোচবিহারের গীতালদহে খুন হওয়া আবু মিঁয়ার স্ত্রী জারিনা বিবি। তাঁর একটাই প্রশ্ন, অভিযুক্ত তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। স্বামীর খুনের সুবিচার পাবো তো? যদিও তিনি মনেপ্রাণে চান, অভিযুক্ত নিশীথ প্রামাণিক (Nishith Pramanik) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেও স্বামীর খুনের যেন ন্যায় বিচার হয়। এদিকে, এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য জানতে চেয়ে এদিন নিশীথবাবুকে টেলিফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মেসেজও পাঠানো হয়েছে। রাত পর্যন্ত জবাব মেলেনি।
জারিনা বিবির বাড়ি গীতালদহ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের খারিজা হরিদাস খামার গ্রামে। তিনি নিজেও গীতালদহ-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের খারিজা হরিদাস সংসদের সদস্য। স্বামী আবু মিঁয়াও একসময় পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী জারিনা বিবি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্ক্রুটিনির দিন ছিল। অভিযোগ, সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়। স্বামী আবু মিঁয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে কোপ মারা হয়েছিল। এতেই প্রাণ হারান আবু মিঁয়া। পরে ওই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অনেকের সঙ্গে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন বর্তমান বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। সম্প্রতি নিশীথ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় জারিনা বিবি বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। মঙ্গলবার তিনি বলেন, আমার স্বামীর খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী। এটা মেনে নিতে পারছি না। আমি ওঁর সাজা চাই। আইনের উপর আমার আস্থা রয়েছে।
আবু মিঁয়ার ছোট ছেলে আসাদুল হক বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে এটা আশা করিনি। নিশীথবাবু তো আমার বাবার খুনের ঘটনার অভিযুক্ত। কী করে প্রধানমন্ত্রী ওঁকে এত বড় দায়িত্ব দিলেন। আমরা এ ঘটনায় হতাশ। আমাদের মামলা এখনও বিচারাধীন।
জারিনা বিবির দাবি, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে স্ক্রুটিনির কাজ সেরে বিডিও অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। এরপর সন্ধ্যার সময় তাঁদের বাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়। সেই আক্রমণে তাঁর ছোট ছেলেও আহত হন। বড় ছেলেকেও মারধর করা হয়। তাঁর স্বামীকে আক্রমণ করা হয়। প্রতিবাদ করতে এগিয়ে গেলে আমাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এমনকী আমার গায়েও হাত তোলা হয়। মাথায়, পায়ে আঘাত করা হয়। জারিনা জানান, রক্ত দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। সেই অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত ও প্রত্যক্ষ প্ররোচনার কথা উল্লেখ করা হয়। সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারেননি জারিনা বিবি ও তাঁর দুই ছেলে সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য। এরপর অনেক দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও অভিযুক্তদের বিচার ও সাজার আশায় দিন গুনছেন এই পরিবারের সদস্যরা। প্রসঙ্গত, ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা নিশীথ প্রামাণিকের হলফনামায় এই মামলার উল্লেখ রয়েছে।