নতুন করোনাবিধির জের, দীঘা ছেড়ে ফিরতে হল বহু পর্যটককে
দীঘায় বেড়াতে গেলে প্রশাসনের তিনটি শর্তের একটি পূরণ করতেই হবে। না হলে দীঘা-দর্শনের সাধপূরণ হবে না। করোনার (Covid19) সংক্রমণ রুখতে প্রশাসনের এ হেন ক়ড়া মনোভাবে শুক্রবার শতাধিক পর্যটক দীঘার দোরগোড়ায় এসেও বাড়িমুখো হতে বাধ্য হলেন।
সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমা প্রশাসন জানায়, দু’টি কোভিড টিকাপ্রাপ্তরাই দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর অথবা শঙ্করপুরের মতো সমুদ্রসৈকতে ঢুকতে পারবেন। অথবা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করানো র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা (র্যাট) বা আরটিপিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে। এই তিন শর্তের একটিও সঠিক ভাবে পূরণ করতে না পারলে পর্যটনকেন্দ্রের কোনও হোটেলে বা কটেজে ঢোকা যাবে না। শুক্রবার সন্ধ্যায় দীঘায় ছুটে আসা বহু পর্যটকই প্রশাসনের কড়াকড়িতে নাকাল হয়েছেন বলে অভিযোগ। তবে ওই শর্তহীনদের জন্য রামনগর-১ ব্লকের বিডিও বিষ্ণুপদ রায়ের সাফ কথা— ‘‘নমস্কার, আপনি আসতে পারেন। আপনি যদি তিনটি শর্তের একটিও পূরণ করতে না পারেন, তবে আপনার দীঘায় ঢোকা বারণ।’’ শুক্রবার দীঘা বাইপাসে নাকা তল্লাশিতে ঠিক এ ভাবেই পর্যটকদের স্বাগত জানিয়েছেন বিষ্ণুপদ। তাঁর কড়া মন্তব্য, ‘‘যে ভাবেই হোক, কোভিডের দু’টি টিকা (COVID 19 Vaccine) অথবা র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা (র্যাট) বা আরটিপিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতেই হবে পর্যটকদের। এই তিন শর্তের একটিও পূরণ না হলে সমুদ্র-দর্শন অধরা রেখেই বাড়ি ফিরতে হবে আপনাকে।’’
প্রশাসনের এ হেন কড়াকড়িতে শুক্রবার সন্ধ্যায় শতাধিক পর্যটক (Tourist) দীঘার (Digha) কাছে গিয়েও বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। বিষ্ণুপদ বলেন, ‘‘শুক্রবার প্রায় দেড়শোরও বেশি পর্যটককে বাড়ি ফিরিয়েছি। যাঁরা ভেবেছিলেন তিন শর্তের একটিও পূরণ না করেই সমুদ্র দেখে বাড়ি ফিরবেন, তাঁদের জন্যও দীঘার দরজা বন্ধ করা হল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি দিন এ ভাবেই নাকা তল্লাশি চলবে দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুর— সর্বত্র। যাঁরা আইন মানবেন না, তাঁদের কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে।’’
যদিও বাড়িমুখো পর্যটকদের একাংশের অভিযোগ, সোমবার কাঁথি মহকুমাশাসকের জারি করা নির্দেশিকায় বার্তা স্পষ্ট নয় বলেই এ নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তির সূত্রপাত। ওই নির্দেশিকায় হোটেলে বা কটেজে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিন শর্তপূরণের কথা বলা হলেও সেখানে না থেকে দীঘা বা মন্দারমণির মতো জায়গাগুলিতে শুধুমাত্র বেড়ানোয় ইচ্ছুকদের জন্য কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি। তাই অনেকেরই ধারণা ছিল যে হোটেলে বা কটেজে না ঢুকেই ঘণ্টা কয়েক সমুদ্র-দর্শন সেরেই ফিরে যাবেন তাঁরা। দীঘায় এসে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নিয়েও ঘোরাফেরা করতে পারবেন বলেও ধারণা করেছিলেন অনেকে।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় সে ধারণা ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শুক্রবার রামনগর-১ ব্লকের বিডিওর নেতৃত্বে পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা দীঘা বাইপাসে নাকা তল্লাশিতে নামেন। পর্যটকদের তাঁরা বুঝিয়ে দেন যে কোভিডের দু’টি টিকা অথবা র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা (র্যাট) বা আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট না থাকলে তাঁদের জন্য দীঘার দরজা বন্ধই থাকবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বহু পর্যটকই একটি টিকার নেওয়ার শংসাপত্র দেখিয়েছেন। কিছু পরিবারের একাধিক সদস্যদের মধ্যে কারও আবার দু’টি টিকা কারও বা একটি টিকার শংসাপত্র রয়েছে। অনেকেই ৪৮ ঘণ্টার বহু আগের আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট সঙ্গে এনেছেন। তবে প্রশাসনের অনড় মনোভাবের জেরে তিনটি শর্তের একটিও সঠিক ভাবে পূরণ করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ির পথে রওনা দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।