করোনার জের, বাড়তে চলেছে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেকটাই থিতু। কিন্তু তাতেও যেন রেহাই নেই সাধারণ মানুষের। এবার বাড়ছে স্বাস্থ্যবিমার খরচ। গত তিন মাসে ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত প্রিমিয়াম (health insurance premium) কিছুটা ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে। আর পরিস্থিতি বলছে, এখানেই শেষ নয়। আগামী দিনে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংস্থাগুলি যেভাবে করোনা চিকিৎসার ক্লেম মিটিয়েছে বা মেটাচ্ছে, তার উপর ভর করেই বাড়তে চলেছে প্রিমিয়াম খরচ।
গত বছর, করোনা (COVID19) সংক্রমণের গোড়ার দিকে ‘করোনা কবচ’ ও ‘করোনা রক্ষক’ নামে দু’টি করোনা বিমা বাজারে আনে সবক’টি স্বাস্থ্যবিমা সংস্থা। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ মে পর্যন্ত বিমা সংস্থাগুলি করোনাকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যবিমা পলিসিগুলির প্রিমিয়াম বাবদ মোট ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা আয় করেছে। কিন্তু ক্লেম মেটাতে বিমা সংস্থাগুলির কাছে আবেদন জমা হয়েছে কত?
বিমা সংস্থাগুলির নিজস্ব সংগঠনের হিসেব, গত মার্চ পর্যন্ত করোনা চিকিৎসার জন্য ৯ লক্ষ ৯৭ হাজার রোগী স্বাস্থ্যবিমার টাকা দাবি করেছিলেন। ক্লেম বা দাবির অঙ্ক ছিল ১৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। আর তার ঠিক দেড় মাসের মাথায়, অর্থাৎ ১৫ মে পর্যন্ত বিমার টাকা দাবি করা রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ১৪ লক্ষ ৮২ হাজার। মোট ক্লেম ছিল ২২ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। করোনার ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণেই এই ক্লেমের টাকা লাফিয়ে বেড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৫ মে পর্যন্ত হিসেব পাওয়া গেলেও, জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার দাবি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই বিপুল টাকার ক্লেম মেটাতে হলে বিমা সংস্থাগুলিকে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বৃদ্ধির পথেই হাঁটতে হবে।
এদিকে দেশের অন্যতম একটি অনলাইন বিমা বিপণন সংস্থার দাবি, প্রিমিয়াম কিন্তু ইতিমধ্যেই বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলি প্রিমিয়াম বাবদ খরচ কত বাড়াল, তার হিসেব কষতে ওই সংস্থাটি একটি সূচক ব্যবহার করে। সেই সূচক অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে মার্চের তুলনায় এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বিমা সংস্থাগুলি প্রিমিয়াম বাড়িয়েছে ৪.৮৭ শতাংশ। অথচ গত বছরের শেষ তিন মাস, অর্থাৎ ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিমিয়াম যা ছিল, পরবর্তী তিন মাসে তা কিন্তু একই রেখেছিল সংস্থাগুলি। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, সবক’টি স্বাস্থ্যবিমা সংস্থা প্রিমিয়াম বাবদ খরচ বাড়ায়নি। যে ক’টি সংস্থা তা বাড়িয়েছে, তাদের প্রিমিয়ামের উপর ভিত্তি করেই ওই হিসেব কষা হয়েছে।
করোনা চিকিৎসার খরচ মেটাতে হিমশিম খেয়েছেন মানুষ। হাসপাতালের মোটা অঙ্কের বিল মেটাতে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে বহু রোগীকে। তাই বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্যবিমা কিনছেন অনেকে। সেই কারণেই সার্বিকভাবে প্রিমিয়াম বাবদ আদায়ও বেড়েছে স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলির। কিন্তু তার পাশাপাশি যেভাবে সংস্থাগুলির ক্লেম বাবদ খরচ বেড়েছে, তা তাদের আর্থিক ফলাফলে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে বাধ্য, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে সেই ক্ষতে মলম দিতে প্রিমিয়ামের হার আরও বাড়বে। তার কোপ সহ্য করতে হবে গ্রাহকদের।