টয়ট্রেনের চাকা নির্মাণকারী সিএলডব্লুর স্টিল ফাউন্ড্রি বন্ধ করতে চলেছে মোদী সরকার?
একদা রেলমন্ত্রকের গর্ব সিএলডব্লু স্টিল ফাউন্ড্রি (CLW Steel Foundry) কি এবার বন্ধ করতে চলেছে মোদী সরকার? একের পর এক কাজ এই ওয়ার্কশপ থেকে আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবার কর্মীদেরও অন্য ওয়ার্কশপে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় গতি আনতেই আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে শ্রমিক মহলে।
দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেনের বগি থেকে চাকা, বহু ঐতিহ্যবাহী ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেনের চাকা প্রস্তুত হয়েছে এখান থেকেই। কিন্তু বর্তমানে নিজস্ব ওয়ার্কশপে বরাত না দিয়ে বেসরকারি সংস্থার থেকে সামগ্রী সংগ্রহ করছে সিএলডব্লু কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলি একাধিকবার আন্দোলন করলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে কর্তৃপক্ষ।
কয়েকদিন আগেই সংস্থার জিএম স্টিল ফাউন্ড্রি পরিদর্শন করেন। কিন্তু সুখবর তো দূরের কথা, শতাধিক শ্রমিককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নোটিস জারি হতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শ্রমিকরা। প্রয়োজনে আত্মহত্যারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
১৯৫০ সালে দেশের বৃহত্তম রেলইঞ্জিন কারখানা গড়ে ওঠে চিত্তরঞ্জনে। মূল ওয়ার্কশপ ও স্টিল ফাউন্ড্রি, সিএলডব্লুর দুটি অংশ ছিল। স্টিল ফাউন্ড্রিতে মূলত লোহা গলিয়ে ঢালাই লোহার কাজ হয়। সেই সময় বগির বডি থেকে চাকা যেখানেই ঢালাই লোহার প্রয়োজন হয়েছে, সেখানেই জোগান দিয়েছে স্টিল ফাউন্ড্রি। তখনই দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী টয় ট্রেনের বডি, চাকাও প্রস্তুত হয়েছে।
একসময় প্রায় ১৮০০শ্রমিক ছিল এখানে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্টিল ফাউন্ড্রির গুরুত্ব কমে। মোদি সরকারের আমলে এই ওয়ার্কশপকে আরও অকেজো করে দেওয়া হয়। আত্মনির্ভর ভারতের বুলি আওড়ানো বিজেপি (BJP) সরকার নিজস্ব সংস্থায় বরাত না দিয়ে তা বেসরকারি সংস্থার হাতে দিতে থাকে। তাতেও এখনও মাসে ৩৫০টন ঢালাই লোহা উৎপাদন করে স্টিল ফাউন্ড্রি। কিন্তু প্রায় সব ইউনিয়নেরই দাবি ছিল, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্টিল ফাউন্ড্রিতেই প্লেটের কাজ শুরু হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকেই সামগ্রী কেনার উপর জোর দিতে থাকে। এরপর কর্মীদের এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। এতেই তা বন্ধের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে। সোমবার স্টিল ফাউন্ড্রির শতাধিক কর্মীর বদলির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মীরা।
শ্রমিক সূত্রে জানা গিয়েছে, একজন শ্রমিক কেরোসিনের বোতল নিয়েই ম্যানেজমেন্টের কাছে গিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। মঙ্গলবারও এনিয়ে বড় আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এককথায় ফের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে রেল শহর চিত্তরঞ্জন। স্টিল ফাউন্ড্রির শ্রমিক সত্যনারায়ণ মণ্ডল বলেন, জীবন দিতে হলেও স্টিল ফাউন্ড্রি বন্ধ করতে দেব না। সাধারণ শ্রমিকদের আন্দোলনের ঝাঁঝ টের পাবে ম্যানেজমেন্ট।
প্রসঙ্গত, সিএলডব্লু বিলগ্নিকরণ নিয়ে রেল শহরের বাসিন্দারা বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে উঠেছিলেন। বিধানসভা ভোটে এই শহর থেকে বিপুল ভোটে লিড পায় তৃণমূল।