স্থুলতার কারণ, ক্ষতিকর প্রভাব ও করণীয়

যখন শরীরে অতিরিক্ত পরিমানে স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয়, শরীরের এই বিশেষ অবস্থাকেই স্থুলতা (Obesity) বলে।

January 13, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্যেঃ Dailyhunt

যখন শরীরে অতিরিক্ত পরিমানে স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয়, শরীরের এই বিশেষ অবস্থাকেই স্থুলতা (Obesity) বলে। স্থুলতায় স্বাস্থ্যের ওপর নানান ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে, যেমন- হৃদরোগ, দ্বিতীয় পর্যায়ের ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, অস্টিওআর্থারাইটিস এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদি। 

অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মানসিক অসুস্থতা, বংশ পরম্পরায় জিনগত বৈশিষ্ট্য থেকে প্রাপ্ত গুণাবলী, কিছু হরমোন গ্রন্থির গণ্ডগোল ইত্যাদিকেই মূলত স্থূল বা মোটা হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। বর্তমানে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের যথাক্রমে শতকরা ২০ ভাগ ও ৩০ ভাগের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই স্থুলকায়। গত ২০ বছরে স্থুলতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩গুণ এবং এই হার অব্যাহত রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে স্থুলতা বৃদ্ধির হার তুলনামুলকভাবে কম।

স্থুলতার কারণ

প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহনে শরীরে খাবার ব্যয়ের তুলনায় খাবার গ্রহণ বেশি হয় এবং শরীরে বাড়তি এনার্জি যোগ হয় এবং ওজন বাড়ে। অপরদিকে খাবার ব্যয়ের তুলনায় খাবার গ্রহণ কম হলে শরীরের ওজন কমে যায়।

জেনেটিক বা বংশগত কারণে স্থুলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যদি বাবা অথবা মায়ের যেকোনো একজনের স্থুলতা থাকে, তাহলে সম্ভাবনা ৪০% এবং যদি উভয়ের স্থুলতা থাকে, তাহলে সম্ভাবনা ৮০%।

দীর্ঘদিন ধরে এন্টিডিপ্রেসেন্ট অথবা কর্টিকোস্টেরোয়েড জাতীয় ঔষধ (এরা শরীরে জল ধরে রাখে) খেলে স্থুলতা হয়।

অপর্যাপ্ত থাইরয়েড ফাংশন, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম ও কুশিং সিন্ড্রোম হলে শরীরে মেদ জমে। অনেক স্থূলকায় ব্যক্তির রক্তে অভুক্ত অবস্থায় উচ্চ মাত্রার গ্লুকোজ ও ইনসুলিন থাকে।

বর্তমানে শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ এবং পরিমান নানা কারনে অনেক কমে গেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনও রকম শারীরিক পরিশ্রমই হয় না। বিশেষ করে শহরাঞ্ছলে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন স্থুলতার জন্য দায়ী।

উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন, ভাবাবেগ, ব্যথা ইত্যাদি হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাওয়া হয়। এ কারনে স্থুলতা হতে পারে।

কোক, পেপসি ইত্যাদি কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। তাই মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে অনেক বেশি।

অতিরিক্ত এ্যালকোহল পান করলে পাকস্থলীর চারদিকে ওজন বাড়ে।

স্বাস্থ্যের ওপর স্থুলতার ক্ষতিকর প্রভাব

টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ, অথেরোস্ক্লেরোসিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, পালমুনারী ইনসাফিয়েন্সী, আয়ু কমে যাওয়া ইত্যাদি এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে, প্রজনন সমস্যা, মাসিকে অনিয়ম ও বন্ধ্যাত্ব, মানসিক ও যৌন সমস্যা, ব্রেস্ট ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, পিওথলির ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, অন্ত্র ও প্রস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়াও, সামাজিক সমস্যা যেমন- চাকরিক্ষেত্রে, বিবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা ইত্যাদি নানান সমস্যা হতে পারে।

কিভাবে স্থুলতা কমানো যায়?

স্থুলতার ব্যবস্থাপনা অবশ্যই পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। প্রথমত, খাদ্য গ্রহণ কমাতে হবে। কারন- স্থুলতায় অতিরিক্ত চর্বি শরীরে জমা হয়। খাবার কম গ্রহনের ফলে অতিরিক্ত চর্বি কমে যাবে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমে আসবে।

দৈনিক কমপক্ষে ১ ঘন্টা দ্রুত হাটতে হবে। অল্প দূরত্বে কখনোই রিক্সা বা গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। এক স্থানে দীর্ঘসময় বসে থাকা যাবে না।

কোনো ব্যক্তির খাদ্য শক্তি নিরূপন করে যদি দেখা যায় তাহার শরীরে ৫ কেজি বেশি ওজন রয়েছে তবে প্রতিদিন ৫০০ কিলোক্যালরি কম খেলে সপ্তাহে ০.৫ কেজি ওজন কমবে অর্থাত্‍ মাসে ২ কেজি। একইভাবে, প্রতিদিন ২৫০ কিলোক্যালরি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিলে সপ্তাহে ০.২৫ কেজি অর্থাত্‍ মাসে এক কেজি পরিমাণ ওজন কমবে।

স্থুলতা প্রতিরোধে করণীয়

  • প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে।
  • দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করতে হবে।
  • শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
  • ওজন ঠিক রাখার জন্য হিসেব করে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করা দরকার, শুধুমাত্র তটটুকুই গ্রহন করতেহবে।
  • প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করতে হবে।
  • প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • অপরিশোধিত শর্করা ও শাকসবজি খেতে হবে।
  • শিশুদের অবশ্যই চকলেট, কোমল পানীয়, ফলের রস ইত্যাদি খাবার হতে বিরত রাখতে হবে।
  • চর্বি জাতীয় খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না।
  • এ্যালকোহল ও বিয়ার খাওয়া একেবারেই বন্ধ করতে হবে।
TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen