ছ’মাসে মধ্যেই এলআইসি, ব্যাঙ্ক বিক্রি করতে হবে, বেপরোয়া বিজেপি সরকার
চলতি আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগে পরিকল্পিত বিলগ্নিকরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই হবে। এই টার্গেট নিয়েছে অর্থমন্ত্রক (Finance Ministry)। সেই অনুযায়ী ‘বিক্রি’র সময় বেঁধে দিয়ে রীতিমতো ফতোয়া জারি হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। তাড়াহুড়ো বেশি এলআইসি (LIC) এবং ভারত পেট্রলিয়াম (Bharat Petroleum) নিয়েই। সরকার ঠিক করেছে, এলআইসিকে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিয়ে যাওয়া হবে বিলগ্নিকরণের দিকে। তবে ভারত পেট্রলিয়ামের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নয়। কেন্দ্রের হাতে থাকা বিপিসিএলের অবশিষ্ট ৫৩ শতাংশ শেয়ারই এবার বিক্রির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। অর্থমন্ত্রক চাইছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই দুই সংস্থা। পাশাপাশি দু’টি সরকারি ব্যাঙ্ক এবং একটি বিমা সংস্থাকেও বিক্রির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাড়তি এক মাস। মোদি সরকারের টার্গেট, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের সাধারণ বাজেটের আগে এই সংস্থাগুলি বেচে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল নিশ্চিত করা। কারণ একটাই, আগামী আর্থিক বছরে আরও কী কী ব্যয় অপেক্ষা করে আছে এবং কোভিড কোন অবস্থায় থাকবে, সে নিয়ে কেন্দ্র এখনও ধোঁয়াশায়। অর্থাৎ, হেস্তনেস্ত করতে হবে চলতি অর্থবর্ষেই।
বিলগ্নিকরণ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এই নিয়ে রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে অর্থমন্ত্রক। সাফ জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত যে ক’টি সরকারি সংস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক বা বিমা সংস্থা আছে, সেই সবেরই চিহ্নিতকরণ এবং বিক্রির প্রক্রিয়া আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। অথচ, গত বছর থেকে লাগাতার চেষ্টা সত্ত্বেও ভারত পেট্রলিয়াম বিক্রি তো দূরঅস্ত, এতটুকু এগতে পারেনি সরকার। একই অবস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার।
কোভিড এবং অর্থনৈতিক জটিলতায় একদিকে যেমন বাজেট বহির্ভূত ব্যয় মাত্রা ছাড়িয়েছে, তেমনই আবার সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ তলানিতে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর, আবার তৃতীয় সংক্রমণের আশঙ্কা শিয়রে। এমতাবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব বিলগ্নিকরণ পদ্ধতি সমাপ্ত করতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র। কোন কোন সরকারি সংস্থা ও ব্যাঙ্ক বিক্রি হবে, সে তালিকা অবশ্য তৈরি করেছে নীতি আয়োগ। সম্প্রতি অর্থসচিব স্পষ্ট বলেছেন, একটি-দু’টি ছাড়া ধীরে ধীরে সব সরকারি ব্যাঙ্কই বেসরকারি হাতে যাবে। এই লক্ষ্যমাত্রাগুলি পূরণ করার জন্য যথাযথ নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেটে। এলআইসি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের পথ দেখছে সরকার। অন্তত ১০ শতাংশ অংশিদারিত্ব একইভাবে ভারত পেট্রলিয়াম বিক্রি করে ৬০ হাজার কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গেই থাকবে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক সহ আরও দু’টি সরকারি ব্যাঙ্ক, একটি বিমা সংস্থা। এই তালিকা অনুযায়ী বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার পর অর্থমন্ত্রক পরবর্তী আর্থিক বছরের জন্য আরও নতুন তালিকা তৈরি করবে। সেই তালিকায় কোন কোন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থা থাকবে, তা নিয়ে এখন থেকেই পর্যালোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অর্থনীতির মন্দা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, সরকারের পক্ষে বিলগ্নিকরণ ছাড়া সরাসরি বৃহৎ তহবিল গঠনের কোনও উপায়ই নেই। এই পরিস্থিতিকে কটাক্ষ করে বিজেপিরই রাজ্যসভার এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী শুক্রবার বলেছেন, সরকার আর কয়েক বছরের মধ্যেই ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। সেটা অর্জন করতে হলে ১৪ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধিহার হতে হবে এখন থেকেই। সেটা কি সম্ভব? অর্থনীতির হাল থেকে স্পষ্ট—সম্ভব নয়।