বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর বিস্মৃত অধ্যায় প্রকাশ্যে আনল এক দুর্লভ দিনপঞ্জি
ঊনিশ শতকে বাঙালির নবজাগরণের অন্যতম প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর প্রয়াণের পর কীভাবে মানুষ স্মরণ করেছিলেন তাঁকে? ইতিহাসের সেই বিস্মৃত অধ্যায়ের খোঁজ দিল একটি দিনপঞ্জি। সেই শতকের আরেক সাড়া জাগানো ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত রামগতি ন্যায়রত্নের দিনপঞ্জি থেকে মিলেছে রাজ্যজুড়ে বিদ্যাসাগরের স্মরণসভা ও শ্রদ্ধাঞ্জলির হদিশ। জানা যাচ্ছে, অবিভক্ত বাংলার জায়গায় জায়গায়, কলকাতা থেকে মফঃস্বলে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সভাগুলিতে উপস্থিত ছিলেন কারা? কোথাও তদানীন্তন ব্রিটিশরাজের লেফটেন্যান্ট গর্ভনর, কোথাও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। আজ, বৃহস্পতিবার পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্রের ১৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই দিনপঞ্জি জনসমক্ষে আনছে হুগলির চুঁচুড়া পুরসভা।
ওই দিনপঞ্জি বা ডায়েরিতে পণ্ডিত ন্যায়রত্ন লিখছেন, ‘কোনও দেশীয় লোকের জন্য কখনও বোধহয় এরূপ সম্মান প্রদর্শন হয় নাই।’ অর্থাৎ সেই সময়ের বিচারে বিদ্যাসাগরের স্মরণসভাগুলি দর্শনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাশাপাশি ব্রিটিশদের নানা কাজের চরম বিরোধী হলেও বিদ্যাসাগরের স্মরণসভায় ব্রিটেনের রাণীর প্রথম সারির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিও বিস্ময়কর। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, পণ্ডিত ন্যায়রত্ন যে বিদ্যাসাগরের স্মরণসভাগুলিকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন হিসাবে দেখেছেন, তার পিছনে এটি একটি কারণ।
পরাধীন বাংলা তথা ভারতের প্রাতঃস্মরণীয় এক ব্যক্তিকে নিয়ে সমসাময়িক এক পণ্ডিতের দিনান্তে লেখা এসব তথ্য যেন অন্ধকারে চকমকি পাথর জ্বেলে দিয়েছে। তবে এই দিনপঞ্জি খুঁজে পাওয়ার গল্পও কম চমকদার নয়। পণ্ডিত ন্যায়রত্ন আদতে হুগলির ইলছোবার বাসিন্দা ছিলেন। একদা তার দিনপঞ্জির কয়েকটি পাতা গবেষণার সূত্রে হাতে পেয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক পণ্ডিত অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ২০২০ সালের শেষের দিকে ন্যায়রত্নের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে একটি ডায়েরির খোঁজ পান তাঁরই প্রপৌত্র সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, চুঁচুড়ার বাসিন্দা আমারই এক দিদির বাড়িতে একটি কুলুঙ্গিতে ওই ডায়েরি ছিল। হঠাৎই সেটি আমি পেয়ে যাই। ওই ডায়েরিতেই ১৮৯২ সালের নানা বিষয় ও তথ্য বর্ণিত হয়েছে। সেই বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, বিদ্যাসাগরের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য দিকে দিকে কার্যত সাড়া পড়ে গিয়েছিল সেই সময়। ননা জায়গায় শুরু হয়েছিল চাঁদা সংগ্রহ। শুধু শহর কলকাতা নয়, গ্রামেগঞ্জে ‘স্মরণচিহ্ন’ স্থাপনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ঝুরঝুরে হয়ে যাওয়া এই দিনপঞ্জি এখন তাই শুধুমাত্র গবেষক, পড়ুয়া থেকে শুরু করে আপামর বাঙালির কাছেই এক প্রাণের সম্পদ হয়ে উঠতে চলেছে।