বিমা বিল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন অমিত মিত্র
লাইফ ইনসিওরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতিতে ৩৬.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে সাধারণ মানুষের আশা-ভরসার এলআইসি। যার মধ্যে ২৩.৭৫ লক্ষ কোটি গভর্নমেন্ট সিকিওরিটিজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাস্তা, ব্রিজ, বন্দর, রেল, সেচ, বিদ্যুৎ, টেলিকমের মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে এলআইসি দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। গ্রাহক প্রায় ৩০ কোটি।
ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্স কোম্পানি। কেন্দ্রীয় সরকারের নানাবিধ বন্ডে ১১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রেখেছে এই বিমা সংস্থা। কর্মরত প্রায় ১৪ হাজার। গ্রাহক প্রায় দু’কোটি। কিন্তু এইসব সংস্থার ভবিষ্যৎই অন্ধকারে। কারণ, নয়া বিল পাশ করিয়ে এই বিমা সংস্থাগুলি বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। যা কার্যকর হলে তিল তিল করে জমানো উপার্জন আম-আদমির হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তাই অবিলম্বে বিমা কোম্পানি বিক্রির উদ্যোগ রুখতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে কড়া চিঠি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। জানালেন, ‘দেশের ৩২ কোটিরও বেশি গ্রাহকের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে মোদি সরকার।’
চিঠিতে অমিত মিত্র বলেছেন, ‘চারটি সরকারি বিমা কোম্পানির মধ্যে প্রথমেই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্স কোম্পানিকে বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। এই কোম্পানিতে ১৩ হাজার ৯৬১ জন কাজ করেন। দেশের ১ কোটি ৭৪ লক্ষ মানুষ এই কোম্পানিতে টাকা রেখেছেন। বছরে ১৭ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আদায় হয়। আর সেই কোম্পানিকেই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চলেছেন! বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণে কমপক্ষে ২ কোটি মানুষ পথে বসতে চলেছে।’
বিগত ৬৫ বছর ধরে সাধারণ মানুষকে আর্থিক নিরাপত্তায় ভরসা জুগিয়ে আসছে এলআইসি। সংশোধনী বিল এনে সেই সংস্থাকে বিক্রির পথ প্রশস্ত করে দেওয়ারও তীব্র সমালোচনা করেছেন বাংলার অর্থমন্ত্রী। উদ্যত নির্মলাকে চাঁচাছোলা ভাষায় লিখেছেন, ‘এলআইসি বিক্রির উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে আপনারা খাদের কিনারায় ঠেলে দিচ্ছেন। সরকার, সরকারি সংস্থা এবং কর্পোরেটকে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এই সংস্থা। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়ে ৩০ কোটি পলিসি হোল্ডারদের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? এই ৩০ কোটি নাগরিকের জমানো টাকাই কেবল নয়, ১ লক্ষ ১৪ হাজার কর্মচারী এবং প্রায় ১ থেকে ১৫ লক্ষ এজেন্টের জীবন-জীবিকাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এখনই এই জনবিরোধী উদ্যোগ বন্ধ হোক।’
তবে শুধু পত্রাঘাতেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখতে নারাজ তৃণমূল। সংসদেও বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হতে কোমর বেঁধে নামছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কারণ, আজ সোমবারই লোকসভায় এই সংক্রান্ত বিলটি (দ্য জেনারেল ইনসিওরেন্স বিজনেস ন্যাশলাইজেশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২১) পাশের জন্য তালিকাবদ্ধ হয়েছে। গত শুক্রবার বিলটি লোকসভায় পেশ করেছেন নির্মলা সীতারামন। বিমা কোম্পানির বেসরকারিকরণে মোদি সরকার এতটাই মরিয়া যে, দু’দিন পরেই তা তড়িঘড়ি পাশ করানোর উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
লোকসভায় বিলটি আটকাতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছেন আরএসপির এমপি এন কে প্রেমচন্দ্রন। এবার সংসদের দুই কক্ষেই বাড়তি উদ্যোগ নেবে তৃণমূল। দলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন রবিবার বলেন, ‘আলোচনা ছাড়াই অগণতান্ত্রিকভাবে বিরোধীদের বুলডোজ করে বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে মোদি সরকার। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কোনওভাবেই বিপদের মুখে ঠেলে দিতে দেব না। বিমা বিল রুখবই।’ যদিও পেগাসাস কাণ্ডে উত্তাল সংসদেও যেভাবে মোদি সরকার মুহূর্তে পরের পর বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে, তাতে বিমা কোম্পানি বেসরকারিকরণ সংক্রান্ত বিল বিরোধীরা কতটা আটকাতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।