রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

কৃষ্ণনগরের সরভাজা, সরপুরিয়া পাচ্ছে জিআই স্বীকৃতি

August 2, 2021 | 2 min read

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত সরভাজা-সরপুরিয়া জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন বা জিআই তকমা পেতে চলেছে। কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের তেমনটাই দাবি। কৃষ্ণনগর শহরের নামের সঙ্গে বহু বছর ধরে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে সরভাজা-সরপুরিয়ার নাম। বাংলার বিখ্যাত মিষ্টিগুলির মধ্যে প্রথমে রসগোল্লা ও পরে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা ও জয়নগরের মোয়া জিআই তকমা পেয়েছে। কিন্তু কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত দু’টি মিষ্টি এব্যাপারে কিছুটা পিছিয়ে। 


জিআই তকমা কোনও সামগ্রীকে নির্দিষ্ট এলাকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে দেশ-বিদেশে বিক্রির বাজার পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রসগোল্লার ক্ষেত্রে জিআই পাওয়া নিয়ে বাংলার সঙ্গে ওড়িশার টানাপোড়েন হয়েছিল। ওড়িশাও রসগোল্লার সৃষ্টিভূমি হিসেবে নিজেদের দাবি করেছিল। শেষ পর্যন্ত কয়েকবছর আগে চেন্নাইয়ে অবস্থিত জিআই রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ শুধু বাংলার রসগোল্লাকে গোটা পশ্চিমবঙ্গের বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা ও জয়নগরের মোয়া অবশ্য স্থানীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়।
কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠন বছর তিনেক আগে সরভাজা-সরপুরিয়ার জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে। এব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনের সহ সম্পাদক তাপস দাস জানিয়েছেন, চেন্নাইয়ে গিয়ে সবরকম নথিপত্র সহ তাঁরা আবেদন করেছিলেন। অনেক আগেই জিআই স্বীকৃতি চলে আসত। কিন্তু তাঁদের সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি তখন না পাওয়ার জন্য সমস্যা তৈরি হয়। পরবর্তীকালে রেজিস্ট্রেশন নম্বর এলেও কোভিড পরিস্থিতির জন্য এটা থমকে যায়। তাপসবাবু জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি সরভাজা-সরপুরিয়া জিআই পেয়ে যাবে বলে চেন্নাইয়ের অফিস থেকে ইঙ্গিত মিলেছে।


মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সভাপতি নিত্য গোপ জানিয়েছেন, এই দু’টি মিষ্টি যে কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্য সেব্যাপারে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। এর স্বপক্ষে ঐতিহাসিক প্রমাণ তাঁরা জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেছিলেন। ৫০০বছর আগেও যে এই দু’টি মিষ্টি ছিল তা প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রায় ৪০জন সদস্য এখানে সরভাজা-সরপুরিয়া তৈরি করেন। তবে মিষ্টি দু’টির উদ্ভাবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েন আছে। শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌতম দাসের দাবি, তাঁর পূর্বপুরুষ অধর দাস সরভাজা-সরপুরিয়া আবিষ্কার করেছিলেন একশো বছরেরও বেশি আগে। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ নিত্যবাবু ও তাপসবাবুরা। তাঁরা বলছেন, দু’টি মিষ্টি অনেক আগে থেকেই ছিল। নির্দিষ্ট কেউ এর আবিষ্কারক নন। 


তবে আবিষ্কারের দাবি নিয়ে টানাপোড়েন থাকলেও মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এব্যাপারে একমত যে কৃষ্ণনগরের বাইরে সরভাজা-সরপুরিয়া এখন যারাই তৈরি করুক না কেন গুণমানে এখানকার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। কৃষ্ণনগর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে সরবরাহ করা দুধের গুণমানের উপর বিশেষ নজর রাখতে হয়। তা না হলে ভালো মানের ক্ষীর, সর তৈরি হবে না। কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবি, দু’টি মিষ্টি তৈরির ‘গোপন ফর্মুলা’ কেবল তাঁদেরই জানা আছে। তাই অনেক চেষ্টা করলেও আসল স্বাদের সরভাজা-সরপুরিয়া কৃষ্ণনগরের বাইরের কেউ তৈরি করতে পারবে না। 
কৃষ্ণনগরের আসল সরপুরিয়া-সরভাজার স্বাদ গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ অবশ্য জিআই তকমা পাওয়ার আগেই শুরু হয়েছে। অনলাইনে বুকিংয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা চালু করেছেন কোনও কোনও ব্যবসায়ী। ভিনরাজ্যে বিয়েবাড়ি বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে অর্ডার এলে পাঠানো হয়। কলকাতা সহ বিভিন্ন শহরে মেলার স্টলেও বিক্রি করা হয়। কলকাতার ইকো পার্কের মিষ্টি হাবের স্টলে কৃষ্ণনগরের এই দু’টি মিষ্টি বিক্রি হতো। কলকাতা বিমানবন্দরে বিশ্ব বাংলার স্টলে তা থাকত। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে দুই জায়গাতে বিক্রি থমকে গিয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#krishnanagar, #Sorpuriya

আরো দেখুন