সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি রোমন্থনে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, সমৃদ্ধ করেছে৷ মনে-প্রাণে জেঠু ছিলেন খাঁটি বাঙালি, ওঁর মতো রুচি, মনন, শিক্ষা-দীক্ষা কি আর এমনি এমনি এত বছর ধরে বাঙালির আদর্শ হয়ে রয়েছে! যেহেতু আমি নিজে এখন ফুড বিজ়নেসের সঙ্গেও যুক্ত, তাই ওঁর খাদ্য বিষয়ক পছন্দ-অপছন্দগুলির কথা না বলে পারছি না৷ এই প্রসঙ্গটা আরও বেশি করে মনে পড়ল, কারণ অভিনয়ের সূত্রে এখনও স্টুডিয়োপাড়ায় আমার যাতায়াত আছে৷ লাঞ্চব্রেকে কী ধরনের খাবার পরিবেশিত হয়, সে প্রসঙ্গে সম্যক ধারণাও রয়েছে৷ বেশিরভাগ খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই৷ তেল-মশলা জবজবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবেশনও করা হয় না, সে সব নিয়ে কেউ মাথাও ঘামান না সম্ভবত৷ ওঁর ইউনিটে এসব ভাবাই যেত না!
জেঠু নিজে খেতে ভালোবাসতেন, কিন্তু খুব বেশি খেতেন না। ওঁকে দেখেই শিখেছিলাম যে কাজের দিনে দুটো স্যান্ডউইচ, একটা ফ্রাই, এক বাটি দই আর পান দিয়ে লাঞ্চ খাওয়া যেতে পারে। বাড়ির বাইরে বা আউটডোর শ্যুটে উনি এটাই খেতেন, তবে ইউনিটের অন্যদের দুপুরের ভাত খাওয়া থেকে বঞ্চিত করতেন না কখনও। আমাদের জন্য বেশ একটা পিকনিক গোছের ব্যবস্থা করা হত। তবে খাবারের মান নিয়ে অসম্ভব খুঁতখুঁতানি ছিল ওঁর। জেঠিমা (বিজয়া রায়) থাকতেন খাওয়াদাওয়ার দিকটা সামলানোর দায়িত্বে। প্রত্যেকে যেন ভালো মাছ পায়, তরকারি ঠিকঠাক হয়েছে কিনা এসব নিয়ে জেঠুকে খোঁজ নিতে দেখেছি প্রতিদিন। জেঠু শাক ভালোবাসতেন, শুক্তো খেতেন। আমার বিয়েতে, পৈতেতেও জমিয়ে খেয়েছেন।
মনে আছে, ‘সোনার কেল্লা’র শ্যুটিংয়ে আমরা যখন জয়সলমিরে গিয়েছিলাম, তখন তো ওখানে ধু-ধু বালির প্রান্তর ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যোধপুর থেকে চাল-ডাল-আলু-ডিম কিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রান্না হত সার্কিট হাউসে। মেনু বলতে ছিল সেদ্ধ ভাত আর খিচুড়ি। কিন্তু সেই সামান্য খাবারটাই এত যত্ন নিয়ে প্রস্তুত করা হত যে খেলে মন ভরে যেত!