নির্বাচন পরবর্তী হিংসা মামলা – রায় স্থগিত আদালতে
ভোটের ফল ঘোষণার আগে এবং পরে হিংসা বা সন্ত্রাসের অভিযোগে রাজ্য পুলিস মোটেই নিষ্ক্রিয় ছিল না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠিত কমিটির সুপারিশ ছাড়াও তারা বহু এফআইআর দায়ের করেছে। আদালতে যে নথি পেশ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখলেই এই দাবির সত্যতা বোঝা যাবে বলে বুধবার দাবি করল রাজ্য সরকার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই ব্যাপারে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানি শেষ হল। রায় ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছে।
রাজ্য পুলিসের ডিজি’র তরফে কমিটির রিপোর্টকে ত্রুটিযুক্ত এক ধাঁধা বলে উল্লেখ করা হয়। কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য পক্ষপাতদুষ্ট। এমন অভিযোগ করে বলা হয়, স্রেফ এই কারণেই কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করা যায় না। উদাহরণ দিয়ে দাবি করা হয়, ভোটের ফল ঘোষণার আগের ঘটনাও যেভাবে রিপোর্টে রাখা হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট যে, ভালভাবে যাচাই না করেই বহু অভিযোগ রিপোর্টে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিংহভাগ অভিযোগই ভোটের ফল ঘোষণার পরবর্তী সময়ের নয় বলেও দাবি করা হয়। বাংলায় করা অভিযোগ ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই তা বদলে ফেলার অভিযোগও করা হয়। বেঞ্চকে জানানো হয়, কমিটির কাছ থেকে পাওয়া ১৪২৯টি অভিযোগের মধ্যে ১৩৩৮টি ক্ষেত্রে পুলিস উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছে। বেঞ্চের জিজ্ঞাসা ছিল, কমিটির কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার আগে পুলিস তাহলে কী করছিল? এই অভিযোগগুলিকে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস কেন বলা যাবে না? কেন পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ গুরুত্ব পাবে না? জবাবে পুলিসের তরফে জানানো হয়, কমিটির কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগুলির অন্তত ৮৬৪টির ক্ষেত্রে কোনও তারিখের উল্লেখ নেই। আটটি খুনের এবং ন’টি ধর্ষণের অভিযোগেও তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
অন্যদিকে রাজ্যের তরফে বলা হয়, পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ২৬৮টি অপরাধের মামলা রুজু করেছে। কমিটির সুপারিশ ছাড়াই এফআইআর হয়েছে। বেঞ্চের জিজ্ঞাসা, শুনানির শুরু থেকেই রাজ্য দাবি করছিল, এখানে কিছুই হয়নি। তাহলে আপনাদের এইসব তথ্য কোথা থেকে এল? রাজ্য জানায়, যেসব অভিযোগ এসেছে, তার প্রায় ৪৫ শতাংশ ২ থেকে ৫ মে’র মধ্যে হয়েছে। যখন রাজ্যের পুলিস ও প্রশাসন ছিল নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন। ভোটের ফলের সঙ্গে ঘটনার সম্পর্ক না থাকলে, তাকে নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস বলা যায় না। বেঞ্চের প্রশ্নের জবাবে রাজ্য জানায়, খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় পুলিসের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলার সংখ্যা আদালতে পেশ করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত চাইলে এনআইএ বা সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্তের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। আদালত চাইলে এবং দরকারে রাজ্যকে তারা সাহায্যও করতে পারে।