মালদায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা
গঙ্গার (Ganga) জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করল মালদহে (Malda)। একইসঙ্গে গঙ্গায় ফের ভয়াবহ ভাঙন শুরু। মাত্র আধঘণ্টায় ৩০টি বাড়ি তলিয়ে গেল নদীগর্ভে। চরম বিপদের মুখে দুর্গারামটোলা, চিনাবাজার, ভীমাগ্রাম, লালুটোলা গ্রামের বাসিন্দারা। গঙ্গা বিপদসীমা পার করায় লাল সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। সেচদপ্তর ও মালদহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা এ নিয়ে সতর্ক। প্রতিনিয়ত তাঁরা নদীর গতিপ্রকৃতির উপর নজরদারি চালাচ্ছেন। এদিকে গঙ্গা বিপদসীমা পার করায় জলের স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। শুক্রবার নতুন করে বৈষ্ণবনগরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আচমকা ব্যাপক ভাঙন শুরু হয় বৈষ্ণবনগরের বীরনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গারামটোলা থেকে চিনাবাজার হয়ে ভীমাগ্রাম লালুটোলা পর্যন্ত। আধঘণ্টার মধ্যে গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যায় ৩০টি বাড়ি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য হারুণ আল রশিদের বাড়িও গঙ্গার গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রাজ্য সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছে। বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বড় অংশে ভাঙন প্রতিরোধের দায়িত্বে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের উপর। কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ২৬ জুন থেকে ভাঙন শুরু হলেও প্রতিরোধের কাজে নামতে অনেকটাই দেরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ এই সংস্থা।
স্থানীয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি রাজীব শেখ বলেন, এক মাসের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে প্রায় চার থেকে পাঁচ দফায় ভাঙন হল। ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ইদানীং কাজ শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। গঙ্গার রুদ্রমূর্তির শিকার হচ্ছেন বৈষ্ণবনগরের বিস্তীর্ণ অংশের বাসিন্দারা। এদিন প্রবল ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুর্গারামটোলা, চিনাবাজারের বাসিন্দা বাবলু শেখ, রহিম শেখরা। তাঁরা সকলেই পেশায় শ্রমিক।
স্থানীয় শিক্ষক জাহিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, চোখের সামনে তলিয়ে গেল একটার পর একটা বাড়ি। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যৌথভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি না সামলালে হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারাবেন। অন্যদিকে, এদিকে গঙ্গাবক্ষে নৌকা চলাচলের পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয়েছে। গঙ্গার জলস্তর বেড়ে গিয়ে নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হলেও বসতি এলাকায় এখনও জল ঢোকেনি। তবে গঙ্গা চূড়ান্ত বিপদসীমা পার করায় বসতি এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা করছে সেচদপ্তর। গঙ্গার পাশাপাশি ফুলহার, মহানন্দা নদীও ফুঁসছে। ফুলহার বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে বইছে বলে সেচদপ্তরের রিপোর্ট। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর ও সেচদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। মন্ত্রী এদিন বলেন, যেভাবে গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আতঙ্ক হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির পাশাপাশি ভাঙন রোধে কাজ চলছে। জেলা সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত বলেন, গঙ্গা বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। জেলা সেচদপ্তর জানিয়েছে, মালদহে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ০.৬০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিহারে বৃষ্টির কারণে এদিকে গঙ্গার জলস্ফীতি হচ্ছে। গঙ্গার বিপদসীমা ২৪.৬৯ মিটার। এদিন সকালে জলস্তর ছিল ২৪.৮৩ মিটার। আর ৫০ সেমি জলস্তর বৃদ্ধি পেলেই ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে গঙ্গা। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জল বেড়েছে ফুলহার, মহানন্দাতেও। গত ২৪ ঘণ্টায় ফুলহারে ৯ সেমি এবং মহানন্দায় ১৪ সেমি জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার প্রধান তিনটি নদীর জলস্তর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় নদী ভাঙনের সঙ্গে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেচদপ্তরের আধিকারিকরা।