আজ ঝাড়গ্রাম সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
গেরুয়া শিবিরের প্রতিশ্রুতির ‘ফানুস’ ফুটো হয়েছে। যে স্বপ্ন বিজেপি দু’বছর আগে জঙ্গলমহলকে দেখিয়েছিল, তা ভেঙে চুরমার। কিন্তু দু’টাকা কেজি চাল, সাঁওতালি আর কুড়মি ভাষার স্বীকৃতি, অলচিকি হরফে পাঠ্যপুস্তক, সারনা ধর্মের স্বীকৃতি, জয় জোহার প্রকল্পে পেনশন, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী—সবই যে বাস্তব! তাই জোড়াফুল ফুটেছে লালমাটিতে। ফের মমতাতেই আস্থা রেখেছেন জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্ররা। ধুয়েমুছে সাফ গেরুয়া শিবির। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রিসভায় সন্ধ্যারানী টুডু, বীরবাহা হাঁসদা আর জ্যোৎস্না মাণ্ডির মতো তিন তিনজন সহকর্মী। ক্ষমতায় ফেরার পর সেই মুখ্যমন্ত্রী প্রথমবার আসছেন জঙ্গলমহলে, আজ, সোমবার বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনে। ধামসা, মাদলের বোল উঠেছে জঙ্গলমহলে। প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে শাল-পলাশের আবাসস্থল। আদিবাসী দিবস উদযাপনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে, সেখানেও সাজ সাজ রব! আওয়াজ উঠেছে—মমতা দিদি, সাগুন দারাম (মমতাদি স্বাগতম), বীরমুলুক রেন দরদিয়ৌ মমতা দি সাগুন দারাম (জঙ্গলমহলের দরদী মমতাদি স্বাগতম)। আদিবাসী সেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে মুখিয়ে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও।
জঙ্গলমহলের যে অংশ আজ ‘মমতাময়’, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ব্যাপক মাত্রায় ‘পদ্মের চাষ’ শুরু হয়েছিল সেখানে। নবান্ন থেকে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প যা ঘোষণা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, ‘মধ্যসত্ত্বভোগী’ একদল মানুষ তা ‘লুটেপুটে’ খাচ্ছিল। ক্ষোভ বাড়ছিল সাধারণের। সেই ক্ষোভের আগুন উস্কে দিতে আসরে নেমে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। আদিবাসী মানুষের জঙ্গল আর জমির অধিকার সুনিশ্চিত করা, ভাষা আর ধর্মের স্বীকৃতির মতো ‘মনমোহিনী’ একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে পদ্মের চাষ বাড়ছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের মোট ৪০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩১টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। শুরু হয়েছিল আস্ফালন, হিন্দুত্ববাদীদের চোখরাঙানি। মুঠো ফোনের ওপারে থাকা পরিহাটির বাসিন্দা সমাজকর্মী সাগিন সোরেনের গলায় স্পষ্ট আক্ষেপের সুর, ‘পদ্মের গন্ধে মজেছিলাম আমরা! মমতাদির সব কাজ এক লহমায় ভুলে গিয়েছিলাম। আসলে স্বজনপোষণ আর দুর্নীতি ক্রমেই বাসা বাঁধছিল, আর সেই সুযোগটাই নিয়েছিল বিজেপি।’ তাহলে মোহভঙ্গ হল কীসে? সাগিন বলে চললেন, ‘ইংরেজ আমলে প্রবর্তিত ছোটনাগপুর টেনান্সি এবং সাঁওতাল পরগনা টেনান্সি অ্যাক্টে সংশোধন আনতে চাইছে ওরা। তা হলে, জমি আর জঙ্গলের উপর কোনও অধিকার থাকবে না ভুমিপুত্রদের। সব বিক্রি হয়ে যাবে। আমরা আদিবাসীরা সারনা ধর্মে বিশ্বাসী, প্রকৃতি আমাদের উপাস্য। গেরুয়া শিবির আমাদের সেই ধর্মকে স্বীকৃতি না দিয়ে হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। এটা কীভাবে মেনে নিই!’ তাই গোটা বাংলার মতোই জঙ্গলমহলও নিজের মেয়েকে চাইল।
সাগিন সোরেনের যুক্তি প্রতিষ্ঠিত ভোটের পরিসংখ্যানেও। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের মোট ৪০টি বিধানসভার মধ্যে ২৮টি দখলে নিয়েছে জোড়াফুল শিবির। শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রদত্ত ভোটের ৫৩ শতাংশ পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপির ঝুলিতে ৩৭ শতাংশ। বিজেপির ভোট কমছে প্রায় ৪০ হাজার। আর মমতার পক্ষে ভোট বেড়েছে প্রায় ৯৪ হাজার। তবে এহেন পরিস্থিতিতেও ফের মাওবাদী জুজু দেখিয়ে শান্ত জঙ্গলমহলকে সন্ত্রস্ত করার ‘খুচরো’ প্রয়াসও ইদানীং শুরু হয়েছে। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সেই ইস্যুতে ‘বজ্রকঠিন’ সিদ্ধান্ত এখান থেকে নেবেন বলেই মনে করছে গোটা জঙ্গলমহল। শাল-পলাশের আবাসস্থলে স্লোগান তুলেছে—দিদি, আমদ লাহা সেনঃ মে, আলে মেনাঃ লেয়া আম সাঁওতে (দিদি তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে)।