বিশ্বভারতীতে বারবার বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা কেন? ক্ষুব্ধ আশ্রমিক-প্রাক্তনীরা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতীতে বারবার রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও বিজেপি নেতাদের যাতায়াত ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতনে। প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন বিশ্বভারতীর বর্তমান প্রশাসন।
এবার বিজেপির শহিদ সম্মান যাত্রার অংশ হয়ে উঠল খোদ বিশ্বভারতী। বুধবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিজেপি নেতাদের এই আনাগোনা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিশ্বভারতীর বর্তমান, প্রাক্তনী সহ শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্বভারতী বর্তমানে রাজনৈতিক আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিজেপি নেতাদের আনাগোনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। এরকম রাজনৈতিক কার্যকলাপ চলতে থাকলে প্রয়োজনে সেন্ট্রাল অফিসের সামনে মঞ্চ করে অনুষ্ঠান করা হবে বলেও হুঙ্কার দেন তিনি।প্রসঙ্গত, নতুন মন্ত্রিত্ব পাওয়া নেতাদের নিয়ে বিজেপির শহিদ সম্মান যাত্রার সূচনা করা হয়েছে। সেখানে মন্ত্রিত্ব পাওয়া নেতাদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এদিন বিশ্বভারতীতে আসেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। তৎপরতার সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শান্তিনিকেতনে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সভাগৃহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছাড়াও দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপকুমার সাহা, বীরভূম জেলা বিজেপির সভাপতি ধ্রুব সাহা সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে সম্মান জ্ঞাপন করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ওই অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন সঙ্গীত ভবনের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা। এরপর বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন ঘুরে দেখেন সুভাষবাবু। বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বিজেপি নেতাদের গেরুয়া বসনে দেখা যায়। গেরুয়া পাঞ্জাবি পরেছিলেন খোদ দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালেও বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বারবার বিজেপি ও আরএসএস ঘনিষ্ঠ নেতাদের বিশ্বভারতীতে আনাগোনার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না বর্তমান পড়ুয়ারা। এমনকী, রাজ্যে বিজেপির পরাজয়ের কারণ নিয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি আলোচনাচক্র আয়োজন করেও বিতর্কে জড়ান বিশ্বভারতীর উপাচার্য। যদিও পরে তা ভেস্তে যায়।পড়ুয়াদের অভিযোগ, বিশ্বভারতীর মতো ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বারবার রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে আরও তলানিতে নিয়ে যাবে। প্রাক্তনীদের মতে, বিশ্বভারতীতে এভাবে সরাসরি রাজনৈতিক যোগ কখনও দেখা যায়নি। এব্যাপারে ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রবেশ অনভিপ্রেত। দিনদিন রাজনৈতিক আখড়ায় পরিণত হচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বিশ্বভারতী ঘিরে যে রাজনৈতিক চর্চা চলছে, তা মোটেই কাম্য নয়। খুব শীঘ্রই এই রাজনীতির চর্চার পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে আশা রাখি। সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও বিজেপি নেতাদের প্রবেশ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন অনুব্রতবাবু। উপাচার্যকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, একের পর এক বিজেপি নেতাকে নিয়ে উনি বিশ্বভারতীতে যেভাবে অনুষ্ঠান করছেন, তা করা যায় না। রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এরকম চলতে থাকলে আমি নিজে পাল্টা ক্যাম্পাসের ভিতরে সেন্ট্রাল অফিসের সামনে অনুষ্ঠান করব।
যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, বিজেপি নেতারা বিশ্বভারতীতে এলে চোখে পড়ে, অথচ তৃণমূল নেতারা পাঁচিল ভাঙলে নজরে পড়ে না। আমি একজন রবীন্দ্র অনুরাগী হিসেবে এসেছি।