দেশের চার কোটি মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে দ্বিতীয় ডোজ পাননি
করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করার অন্যতম হাতিয়ার ভ্যাকসিন। তবে নিতে হবে দু’টি ডোজই। পরামর্শ কেন্দ্রীয় সরকারের। পার্ক থেকে পর্যটনকেন্দ্র—সবেতেই প্রবেশে ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ বাধ্যতামূলক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আহ্বান জানিয়েছেন, যোগ্য হলে দ্রুত টিকা নিন। যত দ্রুত সম্ভব টিকাকরণ সম্পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্বাসই সার! এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাননি প্রায় চার কোটি মানুষ। আর মজার কথা হল, তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) এক প্রশ্নের উত্তরে এই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে খোদ মোদি সরকারই। টিকা-ছুট এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা।
কো-উইন পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪৪ কোটি ২২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৫৪ জন। আর ১২ কোটি ৫৯ লক্ষ ৭ হাজার ৪৪৩ জনের দু’টি ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এমন কতজন রয়েছেন যাঁরা প্রথম ডোজ নিলেও দ্বিতীয় ডোজ পাননি বা নেননি? সম্প্রতি আরটিআই আইনে কেন্দ্রের কাছে সে কথাই জানতে চেয়েছিলেন সমাজকর্মী রমন শর্মা। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেল জানিয়েছে, গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি মোট ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৯৯ জন।
সেই জবাবে আরও বলা হয়েছে, কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিনের দু’টি ডোজের মধ্যবর্তী ব্যবধান আলাদা। কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে ৮৪ থেকে ১১২ দিনের মধ্যে। কোভ্যাকসিনে দু’টি ডোজের ফারাক ২৮ থেকে ৪২ দিনের। কো-উইন পোর্টাল অনুসারে, গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ পাননি ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৭২ হাজার ৯৯৩ জন।
একই দিনের হিসেবে কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৪৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪০৬ জন। সরকারি নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে। তবেই ভ্যাকসিনের পূর্ণ কার্যকারিতা মিলবে। অথচ কেন্দ্রের নাকের ডগাতেই দ্বিতীয় ডোজ-ছুট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। এহেন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেব্যাপারে কোনও ইঙ্গিত মেলেনি সরকারি তরফে। আরটিআইয়ের উত্তরে শুধু জানানো হয়েছে, ধার্য সময়সীমার মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়া টিকাপ্রাপকদের ফের প্রথম ডোজ নিতে হবে কি না, সেব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। ফলে তাদের টিকা-ভবিষ্যত এখন কার্যত অন্ধকারে।
ইতিমধ্যেই ‘মিক্সড ম্যাচ’ বা ‘ককটেল’ ভ্যাকসিনের গবেষণাকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে মিশ্র টিকা বেশি কার্যকরী বলে দাবি করছে বিভিন্ন মহল। ডিসিজিআই এব্যাপারে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ব্যাপারেও সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। কিন্তু, সরকারিভাবে এখনও একই ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক।