স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে এক বছরে ১৫০০ কোটি টাকার সাহায্য প্রদান
ক্যান্সার চিকিৎসা হোক বা বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন। কথায় বলে, রোগ কখনও অর্থবান বা গরিব দেখে আঘাত হানে না। এই সারসত্যটা বুঝেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সবার জন্য এনেছেন তিনি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। যাঁদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগানের সামর্থ্য নেই, তাঁরাও আজ স্বস্তিতে। একের পর এক জটিল রোগের চিকিৎসা আজ সম্ভব হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর সৌজন্যে। শুধু ২০২০ থেকে চলতি মাস পর্যন্ত সময়কালেই এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। সেই টাকা ‘ক্লেম’ করা হয়েছে দপ্তরের কাছে।
২০১৬ সালে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় এই বিমার সুবিধা একটি নির্দিষ্ট মাসিক আয়ের মানুষের ক্ষেত্রেই বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বছর এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেককে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করানোর জন্য সব থেকে বেশি ভিড় হয় প্রত্যেক জেলায়। শুধু রাজ্যে নয়, ভিন রাজ্যেও এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো সম্ভব। বর্তমানে রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের উপভোক্তা দু’কোটি পরিবার। আবার শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার। এই পর্বে মানুষের উন্মাদনা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্যসাথীও পিছিয়ে নেই। এখনও বহু পরিবার প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছেন বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার এই প্রকল্পের সঙ্গে। এ পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ১২ লক্ষেরও বেশি রাজ্যবাসী দুয়ারে সরকারের এই পর্বে স্বাস্থ্যসাথীতে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসায় শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। এই জেলা থেকেই ক্লেম এসেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এছাড়াও পাঁচটি জেলায় স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার বেশি চিকিৎসা করিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তুলনায় কলকাতায় ক্লেম অনেকটাই কম।
জেলাওয়াড়ি স্বাস্থ্যসাথীর উপভোক্তার সংখ্যাতেও শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৯২)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (১৬ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৭১)। জেলার আধিকারিকদের বক্তব্য, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটাই মেটানো গিয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন প্রত্যেক ঘরে চিকিৎসার সুবিধা পৌঁছে দিতে। তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল, কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় প্রাণ না হারান। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব। জেলায় জেলায় এত মানুষ, এত পরিবার যে আজ স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা নিয়ে জটিল থেকে জটিলতর রোগের চিকিৎসা করাতে পারছেন, এটাই আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকারের প্রাপ্তি।