বিরোধী বৈঠকের ফল? পাঁচ রাজ্যে আসন নিয়ে দর কষাকাষি চান না সোনিয়া
কোনও একক দলের স্বার্থে নয়, মোদি বিরোধী লড়াই দেশের স্বার্থে। শুক্রবার মহাজোটের মঞ্চে ভার্চুয়াল বৈঠকের মূলমন্ত্র ছিল এটাই। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান ছিল, ‘বিরোধী এই জোটের নেতা কে, ভুলে যান। মানুষই আমাদের নেতা। তাঁদের নেতৃত্বেই এই লড়াই।’ সেইমতো রণনীতির অভিমুখও ঠিক করে দিয়েছিলেন তিনি।
বলেছিলেন, কোনও একে দলের আধিপত্য নয়, সম্মিলিত বিরোধী জোটের ‘কোর গ্রুপ’ই ঠিক করুক গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল। যাকে ইতিমধ্যে স্বাগত জানিয়েছেন শারদ পাওয়ার, উদ্ধব থ্যাকারে, হেমন্ত সোরেনের মতো শীর্ষ বিরোধী নেতারা। একই পথে হাঁটতে চলেছে কংগ্রেসও। এআইসিসির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যে আসন নিয়ে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে কোনওরকম দর কষাকাষি চান না স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী।
কংগ্রেসের মূল ফোকাস ১৫টি রাজ্য। যেখানে মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সরাসরি ফাইট। তাই পাঞ্জাব, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাত, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কর্ণাটক, কেরল, অসম, ওড়িশা, গোয়ার মতো ওই রাজ্যগুলি থেকেই নিজেদের জয়ের পাল্লা ভারী করতে জোর দিচ্ছে কংগ্রেস।
তৃণমূল সুপ্রিমোর ফর্মুলা, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তাকে মদত করুক অন্যরা। রাজনৈতিক ‘ইগো’ ভুলে এই অভিমুখে এগলেই সাফল্য আসবে। নয়ত, বিরোধীদের মধ্যে যত বিভাজন হবে, ততই নরেন্দ্র মোদির লাভ। গত শুক্রবার সোনিয়া গান্ধীর ডাকা ১৯ দলের বৈঠকেও এ ব্যাপারে বিজেপি বিরোধীরা একমত হয়েছে। খোদ কংগ্রেস সুপ্রিমো বলেছেন, ‘সময়ের ডাক, সব ভুলে সমবেত হতে হবে।’ তারই পরবর্তী অবস্থান হিসেবে সোনিয়ার পরিকল্পনা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে আসন নিয়ে দরাদরি করবে না কংগ্রেস।
বিজেপি বিরোধী দলগুলি জোটধর্ম পালনে যে আসন ছাড়বে, মোটামুটি তাই মেনে নেওয়া হবে। উল্লিখিত রাজ্যগুলিতে তৃণমূল, আরজেডি, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টির মতো বিজেপি বিরোধী দলই শক্তিশালী। তাই তাদের শক্তিকে সমর্থন করেই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটের জয়ের অঙ্ক বাড়ানো হবে বলেই পরিকল্পনা চলছে।
একইভাবে কংগ্রেস যেখানে শক্তিশালী, সেই রাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক দলগুলিকেও একই আচরণ করতে হবে। আগামী ২০ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে বিরোধীদের যে বিজেপি বিরোধী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে এই বার্তা আরও স্পষ্ট হবে। এআইসিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীরের মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি
বিরোধী জোটের রাজনৈতিক দলগুলি কেউ একা প্রবল শক্তিশালী নয়, সেখানে সমানভাবে আসন ভাগাভাগির পক্ষেই কংগ্রেস হাইকমান্ড। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেস অত্যন্ত দুর্বল, অথচ জগন্মোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআরসিপি সোনিয়া-মমতার উদ্যোগে দানা বাঁধতে থাকা বিজেপি বিরোধী মঞ্চে এখন পর্যন্ত নেই। একই অবস্থা তেলেঙ্গানা, দিল্লিতে। তাই এই রাজ্যগুলিতে গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস। একইভাবে উদ্যোগ বাড়ানো হবে উত্তর-পূর্বের রাজ্যেও।