পুজোর আগেই আসতে চলেছে ৩ হাজার টন পদ্মার ইলিশ
ভরা বর্ষাতেও বাজারে দেখা নেই ‘রুপোলি শস্যে’র। যেটুকুর দেখা মিলছে, তার দামে পকেটে ফোস্কা পড়তে বাধ্য! অথচ ওপার বাংলায় এবার ‘রুপোলি ফসলে’র বান ডেকেছে। পদ্মা ও মেঘনার সেই ইলিশের গন্ধ ও স্বাদ এখনও কাঁটাতারের বেড়া পেরতে পারেনি। এপারের বাজারে ঝুড়িভর্তি ইলিশের মন ভালো করে দেওয়া ছবির দেখা আদৌ মিলবে তো? এটাই এখন মৎস্যপ্রেমী পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন। গত বছর পুজোর আগে বঙ্গবাসীর হৃদমাঝারে হিল্লোল তুলেছিল পদ্মার ফসল। এবারও তেমনটা হবে কি না, সেই নিয়ে কৌতূহলের পারদ চড়ছে আট থেকে আশির। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু এপারে ইলিশ আসার ব্যাপারে নিশ্চিত দুই দেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক মাসের মধ্যে দুশোর বেশি ব্যবসায়ী এবার বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে তা রপ্তানির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। পরিমাণটা নয় নয় করেও তিন হাজার মেট্রিক টন। সূত্রের খবর, পুজোর খুশি দ্বিগুণ করতে আগামী সেপ্টেম্বরেই কাঁটাতার পেরিয়ে আসছে মাছের রাজা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আগস্ট মাস শেষ হতে চললেও সাগর বা দীঘায় ইলিশের দেখা সেভাবে মেলেনি। বাজারে অল্পবিস্তর ‘রুপোলি ফসল’ চোখে পড়লেও তার সিংহভাগ খোকা। হাতের তালুর সাইজের সেই মাছ পর্যন্ত বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। বর্ষায় ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে ইলিশের রকমারি পদ পাতে পড়বে না ভেবেই উদাসী হয়ে উঠছে বঙ্গবাসী। অথচ, ওপার বাংলায় ইলিশের জোগানে ঘাটতি নেই। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় সেই মাছের সাইজও আটশো থেকে এক কেজির উপর। রপ্তানির সরকারি ছাড়পত্র না মেলায় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে পাঁচ-দশ কেজি পদ্মার ফসল এপারে ঢুকছে। তবে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
গত ২০১২ সালের জুলাই মাসে অভ্যন্তরীণ কারণ দেখিয়ে এপারে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। সেবার ব্যবসায়ীরা আনতে পেরেছিলেন মাত্র ১০০ টন মাছ। তারপর টানা সাত বছর ওপারের ‘রুপোলি ফসল’ আসেনি এপারে। শেষপর্যন্ত ২০১৯ সালে দুর্গাপুজোর আগে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি মেলে। তারপর ২০২০ সাল। করোনা নিয়ে আশা-আশঙ্কার দোলাচলের মধ্যেও এপারের ইলিশ-প্রেমিকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সেইমতো এবারও ছাড়পত্র মিলবে বলে আশা সেদেশের ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক মহলের।
এরাজ্যের ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অতুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘গত বছর প্রায় ১ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন মাছ পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও রপ্তানিতে ছাড়পত্র দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আশা করছি, সেপ্টেম্বরেই তিন হাজার মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ এদেশে রপ্তানির সুখবর শোনাবে বাংলাদেশ।’