ইংরিজিতে অনুবাদ হল দলিত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর উপন্যাস
ইংরিজিতে অনূদিত হলে দলিত সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর উপন্যাস ‘ছেঁড়া ছেঁড়া জীবন’। অনুবাদ করলেন অরুনাভ সিনহা। ইমন নাম বইটি প্রকাশিত হবে সেপ্টেম্বরে। নবজাত শিশু হিসেবে মায়ের সঙ্গে জেলে প্রবেশ করে ইমন। জেলেই মৃত্যু হয় তার মায়ের। অনাথ হয় সে। বড় হয় জেলেই। তারপর ২০ বছর বয়েসে যখন সে বাইরের জগৎটাকে দেখতে শেখে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয় তার। এই ইমনকে নিয়েই এই উপন্যাস।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ দলিত সাহিত্য একাডেমির সভাপতি মনোরঞ্জন। ছেলেবেলা গরু চড়ানো থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, বেঁচে থাকতে এরকম একাধিক কাজ করেছেন যে মানুষটি, তিনিই এখন বিধায়ক।
নিজেই বলেছিলেন, মা বাবা তাঁর জন্মের তারিখ জানতেন না। সমাজের যে স্তর থেকে উঠে এসেছেন সেখানে এসবের চল ছিল না। জন্মেছেন পদ্মার ওপারে বরিশালে। জ্ঞান হওয়ার আগেই মা বাবা তাঁকে নিয়ে চলে আসেন এপার বাংলায়।
ছোটবেলা কেটেছে বাঁকুড়ার এক রিফিউজি ক্যাম্পে। বাঁকুড়ার ক্যাম্প থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফের ঘোলদলতলা রিফিউজি ক্যাম্পে কাটান ১৯৬৯ পর্যন্ত। এরপর ঘোলদলতলা থেকে মনোরঞ্জন ব্যাপারী ও তাঁর পরিবারকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ঠাঁই হয় দণ্ডকারণ্যে। ১৯৭৩ পর্যন্ত সেখানে কাটিয়ে কলকাতায় আসেন তিনি। জড়িয়ে পড়েন নকশাল আন্দোলনে। গ্রেফতার হয়ে ঠাঁই হয় জেলখানায়। জেলে এক নকশাল নেতার সহযোগিতায় শিখলেন পড়াশোনা। জেলের দেওয়ালে খড়িমাটি দিয়ে দাগ কেটে কেটে চিনতে শিখলেন অক্ষর।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রিক্সা চালানো শুরু করলেন। দিনে রিক্সা চালানো, আর রাতে বই পড়া। এই রিক্সাই মনোরঞ্জনের জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন আনল। তাঁর রিক্সাতেই কলেজে যাওয়া আসা করতেন সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। একদিন মহাশ্বেতা দেবীকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন একটি শব্দের মানে। একজন রিকশাচালকের মুখে অপরিচিত বাংলা শব্দ শুনে বেশ অবাক হয়েছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। তারপর কথায় কথায় মহাশ্বেতা জানতে পারেন তাঁর বই পড়ার নেশার কথা। মনোরঞ্জনকে তিনি ‘বর্তিকা’ পত্রিকায় লেখার কথা বলেন। মনোরঞ্জনের মত মানুষদের জন্যই ওই পত্রিকা করতেন মহাশ্বেতা দেবীরা। ‘বর্তিকা’ পত্রিকা দিয়ে শুরু তাঁর লেখক জীবনের। তারপর একে একে লিখে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি উপন্যাস, একাধিক ছোটো গল্প, প্রবন্ধ ।
জীবনের প্রথম আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন এনে দিয়েছে জাতীয় স্তরের একাধিক পুরস্কার। এখন একাধিক ভাষায় অনুবাদ হয় তাঁর লেখা। ২০১৪ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে সমাদৃত তাঁর লেখা। জার্মানি দিয়েছে ‘রুশো ফেলোশিপ’।
উল্লেখ্য, অরুণাভ সিনহার এখনো অবধি ৫০শের ওপর প্রকাশিত অনুবাদ আছে। তিনি ক্লাসিক, আধুনিক এবং সমসাময়িক বাংলা কথাসাহিত্য এবং ননফিকশন ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।