জানেন কি খাদ্যরসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেমন ছিলেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খাদ্যপ্রীতি ছিল প্রশ্নাতীত। নানান ধরনের খাবার ছিল তাঁর প্রিয়। নিত্যনতুন পদ খেতে তিনি ভালবাসতেন। কেবল খেতে নয়, কখনও কখনও কলম ছেড়ে খুন্তিও তুলে নিয়েছেন কবিগুরু। বিশ্বের নানান দেশ ঘুরে যখন যা খেয়েছেন, যেসব খাবার তাঁর ভাল লেগেছে, পরবর্তীতে সেই খাবারগুলোকে নিজের প্রিয় খাবারের তালিকায় জায়গা দিয়েছেন কবিগুরু।
তাঁর এহেন ভোজনপ্রীতি বাড়ির ঠাকুরঘরকেও প্রভাবিত করেছে। কবিগুরুর সহজাত ভ্রমণ আকাঙ্ক্ষা তাঁকে নিয়ে গেছে বিভিন্ন দেশে। তিনি পরিচিত হয়েছেন অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ও তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে। বিভিন্ন ভোজের নিমন্ত্রণ এবং প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁর মেন্যু কার্ড তিনি সংগ্রহ করেছেন এবং সেগুলো নিয়ে এসে ঠাকুরবাড়ির রসুইঘরের ঠাকুরদের দিয়ে দেশী এবং বিদেশী রান্নার ফিউশন করিয়েছেন, যা থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন স্বাদের খাবার। এই বাড়ির নানা ধরনের খাবার পরবর্তী সময়ে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এরই মধ্যে সেগুলো নিয়ে রন্ধনশিল্পীরা বেশ কিছু বইও প্রকাশ করেছেন।
দেশে ও বিদেশে নানা ধরনের খাবার খেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শেষ পাতে মিষ্টি খেতে ভালোবাসতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি প্রজ্ঞা সুন্দরী দেবী খুব ভালো রান্না করতেন। তাঁর রান্না খেয়ে গুরুদেব অনেক প্রশংসা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে শান্তিনিকেতনের আশ্রমে থাকা অনেক শিক্ষকদের স্ত্রীরা অনেকটা প্রতিযোগিতা করে তাঁর জন্য রান্না করতেন।
প্রতিদিন সকালে উঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক গ্লাস নিমপাতার রস খেতেন। আশ্রমের শিক্ষক অনিল চন্দের স্ত্রী রানী চন্দ প্রায়ই রান্না করে আনতেন তাঁর জন্য। পায়েশ বা বাদামজাতীয় মিষ্টি রবীন্দ্রনাথ ভালোবাসতেন।
রবীন্দ্রনাথ সারাদিনে বেশ কয়েকবার খেতেন। তিনি ভোরবেলায় খুব তাড়াতাড়ি উঠে পরতেন,তার দিনের শুরু হত এক কাপ চা অথবা কফি খেয়ে। একটু বেলা হয়ে প্রাতঃরাশে ভেজা বাদাম, মধু সহযোগে টোস্ট এবং এক কাপ দুধ। আবার মাঝে মাঝে তার ছোটবেলার প্রিয় খাবার সন্দেস, কলা, দুধে ফেলে মেখে খেতেন। এর পর সকাল দশটা নাগাদ তিনি লেবুর রস খেতেন এবং মধ্যাহ্ন ভোজনে রবীন্দ্রনাথ ভাত খেতেন, তবে তিনি
ভাত খুব অল্প পরিমাণে খেতেন। বিকেলে কবির জন্য বরাদ্দ ছিল মুড়ি ও চা। কবির রাতের খাবারে থাকত সব্জির স্যুপ কয়েকটি লুচি ও তরকারী। রবীন্দ্রনাথ দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই মিলে ঘরের মেঝেতে বসে খেতেন কিন্তু রাতের বেলায় তিনি খেতেন ডাইনিং টেবিলে বসে।
আমিষ ও নিরামিষ সব ধরনের খাবারই রবীন্দ্রনাথের পছন্দের তালিকায় ছিল। দেশী বিদেশী কোন খাবারেই তার অরুচি ছিল না। তার প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল ব্রিটিশ পদ, আপেল দিয়ে রান্না খাসীর মাংস, তুর্কী কাবাব, তিনি বিদেশে গিয়ে যে সব খাবার খেতেন সেগুলির রান্না পদ্ধতি জেনে ঠাকুর বাড়ির রান্না ঘরে সেগুলি করার অনুরোধ করতেন।
ঠাকুর বাড়ির মেয়েরা রান্না নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন, নিত্য নতুন খাবারের পদ তৈরিতে তারা সব সময় ব্যস্ত থাকতেন। তারা অতি সাধারণ উপাদান ষেমন পটল ও আলুর খোসা দিয়েও সুস্বাদু পদ তৈরী করতেন! রবীন্দ্রনাথের একটি স্বভাব ছিল তিনি দেশে বিদেশে যেখানেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতেন সেখানকার মেনুকার্ড তিনি সংগ্রহ করতেন এবং সেগুলি তিনি সংরক্ষণ করে রাখতেন এই ঘটনা থেকেই রবীন্দ্রনাথের ভোজন রসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
দেশীয় খাবারের মধ্যে কৈ মাছের তরকারি, চিতল মাছের পেটি ভাজা এছাড়া ভাপা ইলিশ, ফুলকপি দিয়ে তৈরী নানান পদ ছিল রবীন্দ্রনাথের খুব প্রিয়। এছাড়া মিষ্টি খাবারের মধ্যে পায়েস, চন্দ্রপুলি, ক্ষীর, নারকোল দিয়ে তৈরী মিষ্টি, দই এর মালপোয়া, চিড়ের পুলি, মানকচুর জিলিপি, আমসত্ত্ব এগুলি খেতে খুব ভালবাসতেন তিনি। তবে পায়েস ও পিঠে পুলির প্রতি কবির টান ছিল বেশী।
রবীন্দ্রনাথের ফলের প্রতিও একটা আকর্ষণ ছিল। তিনি দুপুরের খাওয়ার আগে ফল খেতেন। যেমন পাকা পেপে, কলা, বাতাবি লেবু আমের সময় আম। তবে আম ছিল রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয় ফল। বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ মাস এলে রবীন্দ্রনাথের ভীষণ খুশী হতেন। কবি আম কেটে খেতে পছন্দ করতেন না তিনি আম চুষে খেতেন।