বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ফিউশন না সাবেকি – রবীন্দ্রসঙ্গীত কেমন হওয়া চাই?

May 8, 2020 | 2 min read

রবীন্দ্রসঙ্গীত কি বিশ্বভারতীর ব্যকরণের বাইরে গিয়ে গাওয়া উচিৎ? এই নিয়ে তর্ক বহুদিনের। বিশেষত প্রাসঙ্গিক হয়েছে কপিরাইট ওঠার পর থেকে। তাছাড়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সাম্প্রতিক কিছু অপ্র্যাশিত ঘটনার ফলে এই প্রসঙ্গ জ্বলে উঠেছে।

অনেকের মতে রবীন্দ্রনাথের নিজের কিছু আপত্তি ছিল তাঁর গান নিয়ে অন্যের বেশী কাঁটাছেঁড়াতে। তার কারণও ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর এতই সুক্ষ্ম যে বেশী ওস্তাদি করলে গানটার মৃত্যু হয় – ঠিক যেমন দ্য ভিঞ্চি বা পিকাসোর পেইন্টিং কিংবা মোজার্ট বা বিঠোফেনের মিউজিক নিয়ে করলে হবে। কেউ কি ফিফথ সিম্ফনি বা টুয়েন্টিফিফথ সিম্ফনি নিজের মত করে বাজাতে পারবেন? মোনা লিসা নিজের মত করে আঁকতে পারবেন?

আবার অনেকে বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষেত্রে আজকের যুগে দাঁড়িয়ে কিছু এক্সপেরিমেন্ট বা এক্সপ্লোরেশন তাদের ভালো লাগে। বিশেষ করে আধুনিক মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেনট দিয়ে গাওয়া হলে। গায়কী, লয় আর ছন্দতে নিজের মত করে কিছু পরিবর্তন করতে পারলে অনেকের আপত্তি নেই। তবে সিরিয়াসলি গাইতে গেলে অ্যারেঞ্জমেনটে বা গায়কীতে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করলেও স্বরলিপি যতটা সম্ভব মান্য করা উচিত। নাহলে সত্যিই গানটার গভীরতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কারণ সুরগুলোতে যে কত ভাবনাচিন্তা আর সূক্ষ্মতা আছে সেটা কেবল সাধক অনুভব করতে পারেন, সব গায়ক পারবেন না। 

অনেকে এক্সপেরিমেন্ট ও এক্সপ্লোরের পক্ষে। তারা রবীন্দ্রসঙ্গীত কেন, সব রকম সঙ্গীত নিয়েই এক্সপেরিমেন্ট এবং এক্সপ্লোরেশন করা উচিৎ বলে মনে করেন। টেকনোতেও কয়েকটা রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালই হবে বলে আমার অনুমান করেন অনেকে।

ফিউশন না সাবেকি – রবীন্দ্রসঙ্গীত কেমন হওয়া চাই?

অনেকে আবার ভাবেন, মাত্রাতিরিক্ত রবীন্দ্রভক্তি একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভক্তকুল নানা রকম গোঁড়ামি করে শিল্প-সাহিত্য চর্চার পথ বাকিদের জন্য কঠিন করে তুলেছে। গানগুলো নতুন সুরে গাওয়া হোক। নতুন বাদ্যযন্ত্রে বাজানো হোক। যার মাথায় যত এক্সপেরিমেন্টাল বুদ্ধি আসে সব ঝালাই করুক। এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে ভাল কিছু বের হলে সেগুলা টিকবে। যেগুলা ভাল হবে না, সুন্দর হবে না, শ্লীল হবে না, সেগুলাও এমনিতেও টিকবে না। দুশ্চিন্তার কিছু নাই।

আবার অনেক মধ্যমপন্থীদের মত, যদি কেউ সঙ্গীত বুঝে, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মর্মবাণী বুঝে, মূল কথা-সুর ঠিক রেখে নতুন সঙ্গীতায়োজন করে সেটা মুগ্ধ করে। কিন্তু আজকাল কিছু অযোগ্যদের হাতে ফিউশনের নামে রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিকৃতি ঘটছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কিছু করতে চাইলে আগে শিখতে হবে, বুঝতে হবে। সেই কাজটা করার মতো যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। তখনই নতুন রূপে, নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে উপস্থাপন সম্ভব।

রবীন্দ্রনাথ তার সঙ্গীত নিয়ে কিছু কথা বলে গেছেন। সেগুলো মাথায় রাখতে হবে। এজন্য রবীন্দ্রনাথের গানের পাশাপাশি তার অন্যান্য সাহিত্য, শিল্পকর্ম সম্পর্কে জানতে হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#রবীন্দ্রজয়ন্তী, #RabindraJayanti

আরো দেখুন